বিএনএ, রাঙামাটি : দেশে ফরমালিন বিহীন ফলের কথা ওঠলেই, নাম আসে পার্বত্য চট্টগ্রামের। তার মধ্যে প্রথমে হ্রদ পাহাড়ের জেলা রাঙামাটি। গ্রীষ্ম ঋতুতে মৌসুমি ফলের ব্যাপক ফলন হয় রাঙামাটিতে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি, পার্বত্য এ জেলায় চলতি মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আবহাওয়া লিচুর জন্য উপযোগী হওয়ায় এখানে প্রচুর পরিমাণে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। এখানকার লিচু মিষ্টি ও বেশ রসালো হাওয়ায় সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। চলতি মৌসুমে রাঙামাটিতে ১ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। ফলে জেলার দুর্গম এলাকা থেকে শহরে আসা লিচু প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তাছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। ভালো ফলনের কারণে নায্য মুল্যে পেয়ে খুশী খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রাঙামাটিতে ১ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪শত হেক্টর জমিতে চায়না-৩, ৪শত ৫০ হেক্টর জমিতে চায়না-২ ও বাকি ৯শত ৫০ হেক্টর জমিতে দেশি লিচুর চাষ হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে তিনশত কােটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুচরা বাজারে দেশি লিচু বাজারে বিক্রি হয়েছে একশটি ১০০ টাকা করে। চায়না-২ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টি ১৮০-২১০ টাকা এবং চায়না-৩ বিক্রি হচ্ছে একশটি ২৮০-৩১০ টাকা। খুচরা বাজার থেকে পঞ্চাশ টাকা কমমূল্যে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় লিচু শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বাজারে দাপট চলছে চায়না-৩ জাতের।
ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এবার ফলন ভালো হয়েছে, পোকা আক্রমণ করতে পারে নি। বৃষ্টি বেশি হলে বাজারজাত করা যায় না, বড় কম হয় এবং পোকা আসে। দেশব্যাপী এবার রাঙামাটির লিচুর চাহিদা হওয়ায় বিগত কয়েক বছরের ঘাটতি পূরণ করা যাবে। তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে লিচু বিক্রি করছেন। সপ্তাহখানিকের মধ্যে রাঙামাটির লিচুর বাজার শেষ হয়ে যাবে বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।
লিচু চাষি রুপায়ন চাকমা বলেন, আমার দুই একর পাহাড় জুড়ে ফলের বাগান আছে। যেখানে বেশির ভাগই লিচুর। আমি শুরু থেকে পরিচর্যা করায় বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করতেছেন। এতে দামও বেশি পাচ্ছি। তবে লিচু বাগানে শেষের পথে।
রাঙামাটি কলেজ গেইট এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, গতবছরের চেয়ে এবার উৎপাদন বেশি হয়েছে। দৈনিক দশ হাজারের মতো বিক্রি করি। বিক্রি কম হলে মাঝে মাঝে লোকসানও হয়। তবে এবারের বাজার ভালো।
মৌসুমে ব্যবসায়ী মকিম মোল্লাহ বলেন, আমি বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করি। বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক ব্যবসায়ীরা এসে আমার থেকে লিচু নিয়ে যান এবং বিভিন্ন স্থানে লিচু পাঠায়। প্রতিদিন আমার পাঁচ হাজারের মতো টাকা লাভ থাকছে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাে: মনিরুজ্জামান জানান, চলতি বছর রাঙামাটিতে ১হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এখানকার লিচু রসালাে ও বিচি ছােট হওয়ায় যার চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত লিচু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। যার ফলে লিচু ব্যবসায় সাড়ে তিনশত কােটি টাকার লেনদেন হবে বলে জানান তিনি।
বিএনএ/ কাইমুল ইসলাম ছোটন,ওজি