29 C
আবহাওয়া
১:০৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১ (রংপুর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১ (রংপুর-৩)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ থাকছে রংপুর-৩ আসনের হালচাল।

রংপুর-৩ আসন 

রংপুর-৩ সংসদীয় আসনটি রংপুর সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১ নাম্বার আসন।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ জাহাঙ্গীর কবির বিজয়ী

১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-২১ নামে পরিচিত ছিল।
নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬ হাজার ৫ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৫ হাজার ২ শত ৯৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ জাহাঙ্গীর কবির বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ৬৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর শাহ ফজলার রহমান। তিনি পান ৮ হাজার ১শত ৩২ ভোট।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির রহিম উদ্দিন ভরসা বিজয়ী 

১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিতি হয় রংপুর-১০ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৮শত ৮১ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৬ হাজার ৬ শত ৩৪ জন। বিএনপির রহিম উদ্দিন ভরসা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল গফুর সরকার। তিনি পান ২৪ হাজার ৭ শত ৯ ভোট।

YouTube player

তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শফিকুল গনি নির্বাচিত

১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১০ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, রংপুর-৩।নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৮শত ৮১ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৮ হাজার ১ শত ৭৩ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শফিকুল গনি বিজয়ী হন। তিনি পান ৪৮ হাজার ৪শত ১৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর মোহাম্মদ আফজাল। কুঁড়েঘর প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৬ শত ৯০ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোফাজ্জল হোসেন বিজয়ী 

১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোফাজ্জল হোসেন বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৮শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সম্মিলিত বিরোধী দলের রফিকুল সালাম গোলাপ। তিনি পান ২২ হাজার ৪ শত ৯২ ভোট।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিজয়ী 

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ৪ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৯ শত ৯৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ১ শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গণতন্ত্রী পার্টি মোহাম্মদ আফজাল। কবুতর প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ৯ শত ৩৮ ভোট।

৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল শুধু নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। তার টেউ লাগে রংপুর ৩ আসনে।এ আসনের ভোট পন্ড হয়ে যায়। ১১ দিন মেয়াদের সংসদে রংপুর-৩ আসনে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি!

সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৮ হাজার ৫ শত ৫৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৩ শত ৯০ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ৫ শত ৯০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সিদ্দিক হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৩ শত ৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬ শত ৭৮ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮ হাজার ৮ শত ৭২ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ হাজার ৩০ হাজার ৫ শত ৬২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৭ শত ৪৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ নির্বাচিত

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত ৯৬ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭১ হাজার ২ শত ১৫ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল কাইয়ুম মন্ডল। ধানের শীর্ষ প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ৬ শত ৪০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ পুনরায় নির্বাচিত

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০ হাজার ১ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ২শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের সাব্বির আহম্মেদ। মশাল প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৪৭ ভোট।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ আবারও বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর- ২ আসনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬ শত ৭১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩১ হাজার ৫৬ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির রিটা রহমান, মশাল প্রতীকে জাসদের সাখায়াত হোসেন রাঙ্গা, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টি এনপিপির সামশুল হক, গোলাপফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আলমগীর হোসেন আলম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ আমিরুজ্জামান, কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির আনোয়ার হোসেন বাবুল, দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৯শত ২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রিটা রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট।
কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রংপুর-২ আসনে প্রথম সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় সংসদে বিএনপি, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম এবং একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিএনএ টিমের জরিপ  

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ১৯৭৩ সালের প্রথম, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নিউজ টিম রংপুর-৩ আসনের ৫টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের চেষ্ঠা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে ভোট প্রদান করেন ৫১.৯২ % ভোটার। আওয়ামী লীগ ৭২.৪৬%, ন্যাপ মোজাফফর ১৪.৭১%, জাসদ ১০.৫০% ভোট পায়।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬০.৫৫% ভোটার। আওয়ামী লীগ ২১.৮৩ %, বিএনপি ৪.৭৩%, জাতীয় পার্টি ৬৮.২৮% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.২৭% ভোটার। আওয়ামী লীগ ১৮.৭০%, বিএনপি ৩.৯৭%, জাতীয় পার্টি ৬৯.৭৫% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.৩৫ % ভোটার। আওয়ামী লীগ ২৫.৭৩%, ৪দলীয় জোট ১০.৮৯%, জাতীয় পার্টি ৬২.৫১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৩০%। ১৪ দলীয় মহাজোট ৭৫.০১, ৪ দলীয় জোট ৭.২৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.০৯% ভোট পায়।

একাদশ সংসদে রংপুর ২ আসনে জাতীয় পার্টি প্রতিনিধিত্ব করছে। দলটির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত।আওয়ামী লীগ, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা তেমন মজবুত নয়। সেদিক থেকে বলা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দখলে থাকবে জাতীয় সংসদের ২১ নম্বর আসন রংপুর-৩।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি , ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ