বিএনএ, কক্সবাজার : বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ দখলকারীদের ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে’ কিছু অংশ থেকে উচ্ছেদ করার এক মাসের মধ্যে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। পুরো উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শেষ না করে হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করায় প্রশাসনের স্বদ্বিচ্ছা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। একই সঙ্গে উচ্ছেদ না হওয়া অবৈধ দখল করা জমিতে পুরোদমে চলছে নির্মাণ কাজ।
যদিও প্রশাসন বলছে উচ্ছেদ করা জমি দখল করলে আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। আর নদীর সীমানা নির্ধারণ হওয়ার পর অন্যান্য অবৈধ স্থাপনাও দখলমুক্ত করা হবে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ পর্যন্ত ২ দিন কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্রের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী কস্তুরাঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রশাসন। যেখানে ৩ শত একর জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৪ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুটিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রশাসন জানিয়েছিল এক যুগ আগে সরকার ঘোষিত নদী বন্দর বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ আদালতের নিদের্শ এ উচ্ছেদ অভিযান। সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অবঃ কমোডর) নরুল আবছার। কিন্তু কার্যত এক মাসে আর কোন উচ্ছেদ অভিযান হয়নি।
রোববার (২ এপ্রিল) কস্তুরাঘাট এলাকা গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়া জমিতে নতুন করে দখল প্রক্রিয়া শুরু করেছে দখলবাজ চক্র। ইতিমধ্যে সেখানে ১০ টির বেশি ঘর তৈরি হয়েছে।
আমান উল্লাহ নামের এক শ্রমিক জানান, তাদের মাঝিই (শ্রমিকদের নেতা) জানবেন কার ঘর তৈরি করতে তাকে নিয়োগ নিয়েছেন। তবে মাঝি তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
হোসেন আহমদ নামের এক যুবক জানান, যে ঘরটি তৈরি হয়েছে ওই জমির সকল কাগজ পত্র তার হাতে রয়েছে। তিনি জানতে পেরেছেন যে মামলার কারণে এ উচ্ছেদ অভিযান হয়ে ছিল তা খারিজ হয়ে গেছে। তাই নিজের জমিতে নিজেই ঘর করছেন।
মনির আহমদ নামের এক বৃদ্ধ জানান, তিনি শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাবুলের জমির পাহারাদার। ঘর করে জমি পাহারা দিচ্ছেন। তবে বাবুলের ফোন নম্বর তার কাছে নেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, বাঁকখালী নদী দখলদার হিসেবে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, ১৩১টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় তা মাত্র ২ জনের দখলে ছিল। যারা বিভিন্ন জনকে বিক্রি করে ছিল। ফলে উচ্ছেদ না হওয়া জমিতে পুরোদমে স্থাপনা নির্মাণ চলছে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ পরিচালক নয়ন শীল জানিয়েছেন, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএ-কে বাঁকখালী নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদীর তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিলো। পরে ওই সময়ের জেলা প্রশাসনের আপত্তির কারণে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভূমি পুনঃ যৌথ জরিপ করা হয়। জরিপে নির্ধারিত জমি হাইকোর্ট এক রীটের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে নদী তীরের ভূমি বিআইডব্লিউটিএ-কে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নয়ন শীল জানিয়েছেন, নদী বন্দরের জমি বুঝিয়ে দিতে বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নদী বন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এতো দখল হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, কিছু অংশ উচ্ছেদ করার পর ব্যাপক অংশ উচ্ছেদে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আবারও দখল করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায়ে ১৮ কিলোমিটার নদীর তীর দখল উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে। প্রশাসনকে দ্রুত রায় কার্যকর করার অনুরোধ জানান তিনি।
রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, উচ্ছেদ হওয়া জমিতে আবারও দখলের খবর নানাভাবে শুনা যাচ্ছে। এটা কোনভাবে মেনে নেয়া হবে না। আবারও উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
বিএনএনিউজ/এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন/এইচ.এম।