18 C
আবহাওয়া
১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » হঠাৎ লকডাউনে নিম্নবিত্তদের হাহাকার

হঠাৎ লকডাউনে নিম্নবিত্তদের হাহাকার

হঠাৎ লকডাউনে নিম্নবিত্তদের হাহাকার

। আজিজুল হাকিম ।। করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে  আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। লকডাউন ঘোষণার পর পরই কমলাপুর রেল গেট, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল, মহাখালি বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে টিকিট নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় রাজধানী ক্রমেই ফাঁকা হয়ে আসছে। যাত্রী কমে যাওয়ায় কেউ কেউ রাস্তায় নামাচ্ছেন না গণপরিবহন। এতে চিরচেনা ঢাকার রাস্তাঘাট যেন অচেনা রুপে আবির্ভুত। সরকার লকডাউন ঘোষণার পরেই সব চেয়ে বেশি হাহাকার নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষদের মধ্যে।
শান্তিনগর চা দোকানী আমজাদ আলী বলেন, ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি  টাকা নাই, ঘরে বসে বসে খাবো। আয় না করলে খাবার জোটে না। তাদের মৃত্যু চিন্তা করে লাভ নেই। সরকার প্রধানের দোষ দেই না। সরকার যাদের দায়িত্ব দেন তারাই গরিবেরর খাবার লুট করে খায়।

তিনি আরো বলেন, গত বছরের লকডাউনে সরকার খাবার দিয়েছেন অনেক। কিন্তু তা আমাদের পর্যন্ত আসে নাই। গরিবের খাবার নেতাদের পেটে। কিছু শিল্পপতিরা আমাদের খাবার দিয়েছে, তা দিয়ে কোনো মতে জীবন চালাতে হয়েছে।

মতিঝিলের কাচাঁবাজারে এক মাছ ব্যবসায়ী জিতু হালদার বলেন, আয় করি তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে। গত লকডাউনে লাখ টাকা দেনা করেছি। সেই ঋন এখনো পরিশোষ করতে পারি নাই। এর মধ্যে আবার লকডাউন। কি করে চলে বুঝে উঠতে পারছি না।

কাকরাইল মোড়ে রিক্স চালক সুলতান হাওলাদার বলেন, সব কিছু বন্ধ হয়ে যায় কী খাবো, সংসার কিভাবে চলবে ভাবতে পারছি না। কোনো জমানো টাকাও নেই যে তা দিয়ে চলব। আল্লাহর উপর ভরসা করে চলতে হবে।

রামপুরা আফতাব নগরের খামারী সালমা বেগম বলেন, করোনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে দুধ বেচা-বিক্রি। বাসা-বাড়িতেও দুধ নেয় না। তাই বিক্রি একে বাড়ে কমে গেছে। প্রতিদিনই দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে।

মালিবাগ রেল গেট মাড়ে সবজি দোকানী জামাল বলেন, কেমনে চলবো বুঝি না। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তিনি যেভাবে চালাবেন সেই ভাবে চলবো। জমানো টাকা নেই যে কয়দিন চলবে।

রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ কর্মব্যস্ত দিনের তুলনায় রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। যান চলাচলও কম। ঘরমুখী মানুষরা বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে ভিড় করেছেন। কমলাপুর, বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে বিপুল সংখ্যক যাত্রী ভিড় করেছেন। এই ভিড় কালও থাকতে পারে। কারণ ঢাকা ছাড়তে পারেন অসংখ্য মানুষ। যাত্রীদের ভিড় নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জানান, ট্রেনের যাত্রী তুলনামূলক অনেক বেশি ভিড় করছে। তবে বাস ও ট্রেনে চাপ সঙ্গে বেশি ভির করছে সদরঘাট লঞ্চঘাটে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

কমলাপুর রেল স্টেশনের কর্মচারী মহাসিন রহমান বলেন, ঢাকামুখী ট্রেনগুলো অনেকটা ফাঁকা। ঢাকামুখী ট্রেনে যাত্রী আসছে কয়েকজন। তবে আজ লকডাউনে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি।

গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে দুপুর থেকেই যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। যাত্রী সামাল দিতে দূরপাল্লার বাস বাড়ানো হয়েছে।

আব্দুল্লাহপুর থেকে পোস্তগোলা রুটে চলাচলকারী রাইদা পরিবহনের চালক আল আমীন বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে যাত্রীসংখ্যা একেবারে কমে গেছে। যাত্রী নেই বলে রাস্তায় গাড়িও বেশি নামেনি।

এরই রাজনৈতিক দলহর বিভিন্ন সংগঠগনের জনসমাবেশ বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলোও। এছাড়া দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে অধিকাংশ বিমানের ফ্লাইট। এই পরিস্থিতিতে সারাদেশের মতো রাজধানীর নাগরিকরাও করোনা আতঙ্কে ভুগছে। তাই তাদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। এদিকে করোনা আতঙ্কে দূরপাল্লার বাসে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, মাত্র ২৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে এখন চলছে বাস। অথচ এই সময় সাধারণত তাদের বাসে শতভাগ যাত্রী থাকে। কিন্তু করোনা আতঙ্ক ও সতর্কতার কারণে যাত্রী ৭৫ শতাংশ কমে গেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, হঠাৎ করেই বাসের যাত্রী সংখ্যা বেশি। অনেকেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

বিএনএ/ ওজি 

Loading


শিরোনাম বিএনএ