বিএনএ, ঢাকা : হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে এক নারীসহ আটক করে পুলিশে খবর দিয়েছে স্থানীয়রা। তবে ওই নারীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন মামুনুল হক।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) তবিদুর রহমান।
শনিবার (০৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে মামুনুল হক সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে আসেন। তখন সঙ্গে একজন নারী ছিল। ওই সময়ে বিষয়টি দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে তাদের কাছে মামুনুল হক দাবি করেন ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুইবছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে।তিনি তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে এক নারীসহ অবস্থান করছেন- এমন খবরে স্থানীয় লোকজন রিসোর্ট ঘেরাও করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মামুনুল হক পুলিশকে জানিয়েছেন সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। পরে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করেছে।
উল্লেখ্য,২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর বিএমএ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর শাখার সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে সমালোচনা জন্ম দেন মামুনুল হক। এ সময় মামুনুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গড়তে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে লাশের পর লাশ পড়বে। আবার শাপলা চত্বর হবে। ‘সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।তার এই মন্তব্যে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।মামুনুল হকের বক্তব্যের পর একটি শ্রেণি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে একের পর এক বক্তব্য দেয়। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ।
এ ছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের পর বিক্ষোভ ও হরতালের পেছনে মধ্যমণি ছিলেন এই মামুনুল হক । অভিযোগ আছে, তার নির্দেশে হেফাজত এসব এলাকায় তান্ডব চালায়।
মামুনুল হক ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে আজিমপুর ঢাকার একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজিজুল হক ছিলেন একজন পরিচিত বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত ও সহিহ বুখারীর প্রথম বাংলা অনুবাদক, যিনি ‘শায়খুল হাদিস’ নামে সমাধিক পরিচিত। তার ভাইবোনের সংখ্যা ১৩ জন।
প্রাথমিক জীবনে মামুনুল হক তার পিতা আজিজুল হকের নিকট লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে ১২ বছর বয়সে তিনি লালবাগ চানতারা জামে মসজিদ মাদ্রাসায় কুরআনের হেফজ (মুখস্থ) সমাপ্ত করেন। ১৯৮৬ সালে ভর্তি হন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকায়। ১৯৯৩ সালে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা থেকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধীনে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে প্রথম স্থান, ১৯৯৫ সালে স্নাতক শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান এবং ১৯৯৬ সালে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পাশাপাশি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স সমাপ্ত করেন। ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজত আন্দোলনে নেতৃত্বের জন্য ১২ মে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
বিএনএ/ ওজি