27 C
আবহাওয়া
১২:৫১ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ১৩, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » চরম সংকটে আরব বিশ্ব, বাড়বে জ্বালানির দাম

চরম সংকটে আরব বিশ্ব, বাড়বে জ্বালানির দাম


বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ইরান সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। জর্ডানে মার্কিন ঘাটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার জেরে সিরিয়া ও ইরাকে ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরিকল্পনার অনুমোদনের একদিন পরেই তা কার্যকর করলো যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়া ও ইরাকে ৮৫ এর বেশি ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।

YouTube player

এই হামলায় বিভিন্ন ধরনের মার্কিন যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। যার মধ্যে দীর্ঘ পাল্লার বোমারু বিমানও ছিল। বিবিসি বলছে, সাতটি জায়গায় এসব হামলা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে সিরিয়ায় চারটি জায়গায় এবং ইরাকে তিনটি জায়গায়। দেশ দুইটিতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এলিট বাহিনী কুদস ফোর্স এবং তাদের সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনায় লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হয়েছে তার মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, সামরিক রসদভান্ডার এবং ড্রোন স্টোরেজ ইউনিট মার্কিনও ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব হামলাকে সফল হিসেবে দাবি করা হয়েছে। এই হামলায় ৩০ মিনিট সময় লেগেছে বলে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে মার্কিন বাহিনীর এসব হামলা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে- তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অন্যদিকে ইরান বলেছে, যে কোনো হামলার কড়া জবাব দিতে তারা প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের এই পালটাপালটি অবস্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এ পর্যন্ত ২৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলার শুরু থেকেই ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি এই সংঘাত যেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যত্র ছড়িয়ে না পড়ে সে চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ও স্থাপনা টার্গেট করে হামলা হচ্ছে। একই সঙ্গে লোহিতসাগরেও যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা।

সর্বশেষ গত রবিবার সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানে একটি ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসন সিরিয়া এবং ইরাকে থাকা ইরানি বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে এই হামলা চালানো হবে। ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে পরিচিতি ঐ গোষ্ঠীটিতে এমন কিছু সশস্ত্র যোদ্ধা রয়েছে যাদেরকে অস্ত্র, তহবিল ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী রেভোলিউশনারি গার্ডস ফোর্স। ধারণা করা হয়, গত রবিবারের হামলার পেছনে এই গোষ্ঠীর হাত ছিল। তবে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী- সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় যে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল তা ইরানেই তৈরি করা এবং ইউক্রেনে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে রাশিয়ায় ইরান যে ড্রোন পাঠিয়েছে তার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরানের মাটিতে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের চাপ রয়েছে। এর মধ্যে ওয়াশিংটনে থাকা ইরানের কট্টর সমালোচকরাও রয়েছেন। তবে জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি ঐ অঞ্চলে সংঘাত বিস্তৃত করতে চান না।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, তার দেশ যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তবে হামলা করা হলে জবাব দেবে তেহরান। ইতিমধ্যে সিরিয়া থেকে সিনিয়র অফিসারদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনী।

মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই তেহরানের। এই গোষ্ঠীগুলো গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন বাহিনীর ওপর ১৬০টি হামলা চালিয়েছে। হয়তো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আর্থিক ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করলেও, হামলার নির্দেশ দেয়নি ইরান। যে কারণে এই অঞ্চল এখন সম্ভবত সবচেয়ে জটিল সময় অতিবাহিত করছে। এসব গোষ্ঠীর বেপরোয়া আচরণ বড় ধরনের সংঘাত ডেকে আনতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র, এই দুই দেশের মাঝে বৈরিতার ইতিহাস আজ নতুন না। বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতার শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। ঐ সময় ইরানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদেক তেল সম্পদকে সরকারিকরণ করতে চেয়েছিলেন। কারণ, এর বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করত ব্রিটিশরা। কিন্তু এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। মনে করা হয় যে, এই অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের ভূমিকা ছিল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মোহাম্মদ রেজা শাহ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তখন ইসলামপন্থি নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে যান। তবে শাহের বিরোধিতা করার পর তিনি নির্বাসনে ছিলেন। কিন্তু, সত্তরের দশকে ইরানের জনগণের বড় অংশ শাহের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে প্যারিস থেকে খামেনি আবার ইরানে ফিরে আসেন। ঐ বছর থেকেই খামেনি হয়ে ওঠেন দেশটির প্রথম ‘সুপ্রিম লিডার’।

সেই সময় নতুন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে আমেরিকাবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে খামেনিপন্থি ছাত্ররা তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে ঢুকে পড়ে। ৫২ জন আমেরিকানকে ৪৪৪ দিন জিম্মি করে রাখে তারা। এই ঘটনায় প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

বিএনএ/ ওজি/এইচ মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ