বিএনএ,ঢাকা:যাদের নকশার ত্রুটির কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে এবং ব্যয় বাড়ছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এখন থেকে কোন প্রকল্পই নীরিক্ষা ছাড়া না নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি)রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি(একনেক)র সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,যাদের গাফিলতির কারণে প্রকল্পের সময় ও অর্থ বাড়ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য তাগিদ দেন তিনি।পাশাপাশি সভায় প্রধানমন্ত্রী মানুষকে পানি ব্যবহারে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অপচয় না করার আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান।
সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।তিনি জানান, প্রকল্প গ্রহণের পর দেখা যায় দুই-একটি আইটেম বেড়ে গেছে।আবার মূল্য বেড়ে যায়।এতে প্রশ্ন তৈরি হয় তাহলে কি সঠিকভাবে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়নি? প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে করা হয়নি? দেখা গেছে দাম বেড়েছে, অনেকগুলো আইটেম নতুন যুক্ত হয়েছে।যেটা মূল প্রকল্পের ডিজাইনে ছিল না। তাহলে প্রশ্ন হলো, যারা ডিজাইন করেছে সেখানেই সমস্যা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,কাদের গাফিলতির কারণে প্রকল্পের ডিজাইন সঠিক হলো না,সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হলো,প্রধানমন্ত্রী ওইসব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে বলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিধান যেটি আছে তা নিতে হবে।ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেটা দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ধরনের অসম্পূর্ণ প্রকল্প গ্রহণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায় রয়েছে স্বীকার করে এম এ মান্নান বলেন,কাদের দায়ে এই অবস্থা হয়েছে,কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।বৈঠকে ব্রিজ নির্মাণে সাইট সিলেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।অহেতুক বা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য করা যাবে না।জনগণের প্রয়োজনে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে।কোনও চলমান নদীর প্রবাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটা দেখতে হবে।
অধিক সংখ্যক ঠিকাদার যাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, প্রধানমন্ত্রী তা দেখতে বলেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভালো ঠিকাদার ভালো কাজ করে।তাদের পুঁজি ও দক্ষতা রয়েছে।কিন্তু এর বাইরে নতুন যারা আসতে চায়, তাদেরও সুযোগ দিতে হবে।এজন্য প্রধানমন্ত্রী আইনের মধ্যে থেকে কোনও কাজে অধিক সংখ্যক ঠিকাদার যাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় তা দেখতে বলেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করতে বলেছেন।কোন নদীতে কোন জায়গায় ব্রিজ হবে তার একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে রাখতে বলেছেন।অন দ্য স্পট সিদ্ধান্ত না নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পে পিডি নিয়োগ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্প চলমান থাকে কোনও এক প্রান্তে, কিন্তু পিডি ঢাকায় পড়ে থাকেন।একই ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হয়।এটি যাতে না হয় প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।এজন্য তিনি আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।প্রকল্প চলাকালে যেসব প্রকল্প পরিচালক উপস্থিত থাকবেন না তাদের বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় ১১ হাজার ৩‘শ ২৪ কোটি টাকা খরচে ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।অনুমোদন দেয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি সংশোধিত এবং ছয়টি নতুন প্রকল্প।যা বাস্তবায়নে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৮ কোটি ১২ লাখ, সরকার দেবে ৫ হাজার ১৪০ কোটি ৩৯ লাখ এবং বিদেশি ঋণ ৬ হাজার ১৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
তিনি জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে।এখন ২ হাজার ৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা করা হয়েছে।২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে।সংশোধনীতে প্রকল্পটির খরচ ২ হাজার ৯০৩ কোটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮ হাজার ১৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা।২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল।এখন মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
নতুন অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘টাঙ্গাইল জেলার ১০টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন’প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ’ প্রকল্প, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন,বিদ্যুৎ বিভাগের হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেেএকনেকের সভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অবস্থান করে সভায় অংশ গ্রহণ করেন।
বিএনএনিউজ/আরকেসি,হাসনা