।। মোহাম্মদ ইয়াসির আফনান ।।
বিএনএ, চুয়েট: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) সূলভ মূল্যে ভালো খাবার পরিবেশনের নিমিত্তে গত বছরের ২১ মে উদ্বোধন করা হয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়া। উদ্বোধনের কিছুদিন পূর্বে মূল্য তালিকা প্রকাশিত হলেই শুরু হয় খাবারের দাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ। এ অসন্তোষ যেন পিছু ছাড়ছে না চুয়েট টিএসসি’র ক্যাফেটেরিয়ার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরাবরই শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত দামের সমালোচনা করে আসছে।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন-১ এবং ক্যান্টিন-২ এ অপেক্ষাকৃত কম দামে তখনও খাবার পাওয়া যেতো। কিন্তু গত দুর্গা পূজার বন্ধের পর ক্যান্টিন ২টি আর খোলেনি। ক্যান্টিন ২টি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ক্যাফেটেরিয়ার উচ্চ দামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস অবস্থা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২য় বর্ষের (‘২০ ব্যাচ) শিক্ষার্থী রুবাইয়াত ফেরদৌস আলভী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান দামের তুলনায় খুবই নিম্নমানের। যেকোন খাবারের দাম আমি দেশের অন্য একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সাথে তুলনা করে দেখেছি, একই মানের খাবারের দাম এখানে দেড় গুণেরও বেশি। অথচ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রায় একই রকম আয়ের পরিবার থেকে এসেছে। এটা মাথায় রেখে ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মূল্য কমানো উচিত। আর যদি নিতান্তই তাদের মনে হয় খাবারের দাম কমালে তারা শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবসা করতে পারবে না, সেই যুক্তিটাও খাটবে না। কারণ, খাবারের মান দামের তুলনায় অর্ধেকের কাতারে আছে।
চুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ চট্টগ্রাম শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে খাবার দাবার করলেও শহরের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের জন্যে ক্যাফেটেরিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়। এমনই একজন প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (‘২০ ব্যাচ) শিক্ষার্থী শাফকাতুল ইসলাম।
শাফকাতুল বলেন, খাবারের দাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনেক বেশি। রেস্টুরেন্টের দামের সাথে এখানের কোন পার্থক্য নাই। খাবারের মানও সাদামাটা। আর্থিক সমস্যা ও খাবারের মানের কারণে অনেক বন্ধুকে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখেছি। দামটা আরো ধরা ছোঁয়ার মধ্যে হওয়া উচিত ছিল। এছাড়াও টিএসসিতে ওয়াইফাই সুবিধা না থাকায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুয়েটের ক্যাফেটেরিয়াতে শুধু ১ প্লেট ভাতের মূল্য ২০টাকা। সাথে যদি কেউ মুরগী খেতে চান তাহলে গুনতে হবে আরো ৭০ টাকা। মুরগী ছাড়াও রয়েছে রুই মাছ ৬০ টাকা, গরু ১৩০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানি ১৩০ টাকা। খাবার দাবারের পর যদি একটু মিষ্টি খেতে মন চায় তাও রক্ষা নেই। মিষ্টি দই খেতে হলে খরচ করতে হবে প্রায় ৩০ টাকা। ফালুদার দাম ৮০ টাকা।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমকে বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির দিকে তাকালে দামটা কমানো কষ্টকর। খাবারের মানের দিকটায় আরো নজর দেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের মনিটরিং কমিটি রয়েছে। অনেক সময় অনেক সমস্যা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এমন সমস্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না লিখে আমাদের কাছে আসলে সেটা সমাধান করতে আরো সুবিধা হবে। আমরা এখন ইমেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রেখেছি।
ক্যান্টিন-১ ও ক্যান্টিন-২ এর বন্ধ হওয়া ক্যাফেটেরিয়াকে একচেটিয়া ব্যবসার (মনোপলি) সুযোগ করে দিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তিনি জানান, ক্যান্টিনগুলো রাখার সুযোগ ছিল না। আমরা ক্যান্টিন-৩ এর দিকে নজর দিচ্ছি। কিভাবে এটিকে আরো উন্নত ও মানসম্মত করা যায় সে চেষ্টা চলছে।
উচ্চ দামের বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার খাইরুল হোসেন বলেন, বাজারের উঠতি মূল্যের কারণে আমাদের এখানে দাম এমন। আমরা চেষ্টা করি খাবারের দাম আর মানের যাতে ভারসাম্য থাকে। আমাদের এখানের সকল মূল্য ছাত্রকল্যাণ দপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত। এর থেকে কম দামে খাবার বিক্রি করার কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই।
বিএনএ/এমএফ