বিএনএ,আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): আগামী ৫ জানুয়ারি ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনের দুই দিন বাকী থাকতেই সহিংস হয়ে ওঠছে আনোয়ারা। বিশেষ করে ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে নৌকা আর বিদ্রোহীরা রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। ঘটছে প্রতিনিয়ত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মারামারি অফিস ভাংচুরের মত ঘটনা। ভোটের দিন কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ দিচ্ছে হুমকি। বিশেষ করে কেন্দ্র ঝুঁকিতে রয়েছে ৫নং বরুমছড়া ইউনিয়নে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই ইউনিয়নে বেশ ক’বার হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। অপর দিকে ইয়াবার ট্রানজিট সড়ক রায়পুরে চলছে টাকার খেলা। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী থেকে শুরু করে বেশ ক’জন ইউপি সদস্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এর মধ্যে আবার উপজেলা জুড়ে চলছে রাতের আঁধারে টাকার খেলা। চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ইউপি সদস্যরা এলাকায় এলাকায় ঘোষনা দিচ্ছে নির্বাচনী তাদের বাজেটের কথা। যা টাকা যাবে যাক তবুও তাদের মেম্বার হওয়া চাই। কেউ ১০লাখ কেউ বিশ লাখ কেউ কেউ আবার ৩০ থেকে ৪০ লাখ। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বাজেটের ঘোষণা কোটি টাকার উপর। জনমনে প্রশ্ন জাগছে, কারা এই টাকা ছড়াচ্ছে এই টাকার সন্ধান কোথায়।
বিশেষ করে আনোয়ারার উপকূলীয় দুই ইউনিয়ন রায়পুর, বারশত ও সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী ইউনিয়ন গুলোতে চলছে কালো টাকার ছড়াছড়ি।
আনোয়ারার সচেতন মহল মনে করেন, মাদকের নিরাপদ ট্রানজিট রুটগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে চাই জনপ্রতিনিধির ছদ্মবেশে মাদক ব্যবসায়ীরা। এই ইউপি নির্বাচনে অর্থ বিনিয়োগ করে জনপ্রতিনিধির ছদ্মবেশে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করবে তারা। সে জন্য সাধারণ ইউপি সদস্য প্রার্থীরা পর্যন্ত দুই হাতে উড়াচ্ছে কালো টাকা। নির্বাচন কে সামনে রেখে টাকা বিনোয়েগের মাধ্যে কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্যদের প্রার্থীরা করছে সক্রিয়। যার ফলে আনোয়ারা হয়ে ওঠছে সহিংস। ঘটছে প্রতিনিয়ত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ব্যবহার হচ্ছে দেশীয় আগ্নেয় অস্ত্র।
মাদক দ্রব্য অধিদফতর ও আনোয়ারা থানা সূত্রে জানা যায়, মাদক দ্রব্যের তালিকাভুক্ত একজন এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে ৩১৬ বোতল বিদেশী মদসহ পুলিশের হাতে আটক হয় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম বেগমের ছেলে আক্তার হোসেন (৩০)। ইয়াবা সেবনকালে রায়পুর ইউনিয়নের ইসমাইল নামক এক ইউপি সদস্যকে আটক করে পুলিশ । গত ২৫ অক্টোবর চাতরী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাসেমের ছেলে সোহেলকে আটক করে র্যাব। এছাড়াও অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী এবারে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
রায়পুর: রায়পুরের ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবারেও তিনি নিয়ে নির্বাচন করছেন। নৌকাকে যেথাতে স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামিলীগ নেতারা একাট্ট। অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামিলঅগের সভাপতি আমিন শরীপ। সেখানে চলছে আওয়ামি লীগ বনাম টাকার খেলা।
নৌকা প্রার্থী জানে আলম বলেন, নৌকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকা। রায়পুরের মানুষ টাকায় বিক্রি হয়না। তারা নৌকাকে যেতাতে চাই।
বরুমচড়া: স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি মনোনয়ন ফরম নেওয়ার পর থেকে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা আমার নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা দেওয়া, পোষ্টার ছিড়ে ফেলা, মাইক ভেঙে ফেলাসহ আমি এবং আমার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে পরিকল্পিতভাবে বহিরাগত লোকজন নিয়ে আমি এবং আমার কর্মী সমর্থকদের উপর অতর্কিত হামলা করে এবং আমার নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করে। একই সময় মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে কানুমাজির হাট এলাকায় সাবেক সাংসদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র মৃত্যু বার্ষিকীর ব্যানারে আমার নাম থাকায় তারা সে-ই মহান ব্যক্তির ব্যানারও ছিড়ে ফেলে। এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বসর বলেন, নির্বাচন সুষ্ট হওয়া চাই এখানে টেনে নিবে ছিড়ে নিবে সেটি হবে না। এটি হলে আমরা যা করা দরকার তা করে প্রতিরোধ করব।
ঝিওরী: ৬ নম্বর বারখাইন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবু নির্বাচনের আমেজ কমেনি। মেম্বার প্রার্থীরা রাতদিন প্রচারণা চালিয়ে সরগরম রেখেছেন।এই ইউনিয়নের ১ নম্বর ঝিওরী ওয়ার্ডের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। এখানে অনেকটা হেসে-খেলে মেম্বার নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন কামাল উদ্দিন। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। নতুন মূখ সাবেক চেয়ারম্যান একেএম শাহজাহান চৌধুরীর ছোট ভাই একেএম সরওয়ার জাহান চৌধুরী। ফলে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রথমবার নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে নির্বাচনী প্রচারেও চমক দেখিয়েছেন সরওয়ার জাহান চৌধুরী।তবে সরওয়ার জাহানের শঙ্কাও কম নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা এলাকার ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে হিন্দু ভোটারদের। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি প্রতিবার নির্বাচনে মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী ও শহরে অবস্থানকারি ভোটাদের জাল ভোট দিয়ে থাকে। তবে এবার এ ধরনের জাল ভোট প্রতিহত করা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিএনএ/এনামুল হক নাবিদ, ওজি