30 C
আবহাওয়া
৪:৩২ অপরাহ্ণ - অক্টোবর ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এখনই মেয়রের চেয়ারে বসতে পারছেন না শাহাদাত!

এখনই মেয়রের চেয়ারে বসতে পারছেন না শাহাদাত!

এখনই মেয়রের চেয়ারে বসতে পারছেন না শাহাদাত!

বিএনএ, ঢাকা: গণ আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পরপরই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। মন্ত্রী-এমপিসহ সবাই আত্মগোপনে চলে যায়। একই পদ ধরেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীও। গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় গত ৬ আগস্ট। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৯ আগস্ট সারাদেশের ১২টি সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হয়। সে সব পদে বসানো হয় প্রশাসক। তখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই অবস্থায় নির্বাচনের ১ বছর ৪ মাস বাকি থাকতে ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমীন বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচিত হওয়ার ফলাফল বাতিল ঘোষণা করেন আদালত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির আদেশও দিয়েছেন। বিষয়টি ‘টক অব দি কান্ট্রি’ হয়ে ওঠে। সর্বত্র চলছে আলোচনা- সমালোচনা।

রায় পেলেও এখনই মেয়রের আসনে বসতে পারছেন না ডা. শাহাদাত হোসেন। এমনটাই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে সময় থাকে ৩০দিন। এই সময় পর্যন্ত ইসি কোন গেজেট প্রকাশ করতে পারবে না। কেননা আপিলের সময় পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে অপেক্ষা করতে হবে। এই মামলায় ৯ জন বিবাদী রয়েছে, যে কেউ এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করতে পারে।

অন্যদিকে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করতে নিয়ম অনুযায়ী কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিগত কমিশন পদত্যাগ করায় এ নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেছেন, নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পর দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল করার পর তার শুনানি শেষ হতে হতে আর একটি নির্বাচনের সময় এসে যাবে। তখন ওই রায় কোন কাজে লাগবে কিনা এমন প্রশ্ন তুলেন সাবেক এই সচিব।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমীন বলেছেন নির্বাচনের দিনের নির্বাচনী চিত্র, ঘটনা ও অনিয়ম এবং স্থানীয়, জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে প্রকাশিত অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের পাহাড়সম অভিযোগে প্রতীয়মান হয় যে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২১ একটি পূর্বপরিকল্পিত তামাশার, প্রহসনের এবং সরকারি দল মনোনীত প্রার্থীকে মেয়র ঘোষণা দেওয়ার কৃত্রিম আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সব ভোটারের অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শাহাদাত হোসেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র নির্বাচিত হতেন, রেজাউল করিমের বিপক্ষে। বাদীর ফলাফলের পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে অবিশ্বাস্য ও অযৌক্তিক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ভোটের ফলাফলে সই করেন। কিন্তু কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশে জালজালিয়াতি ও চরম অনিয়মের চিত্র স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়। বিবাদীরা নির্বাচনী আইন ও বিধিমালাকে কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে ১ নম্বর বিবাদী রেজাউল করিমের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিয়ে অন্যায় ও অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন।

আগের ফলাফল বাতিলের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০–এর ৬১(৫) ধারা উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে। এ ধারায় বলা হয়, ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল নির্বাচনী দরখাস্ত শুনানির পর কোনো নির্বাচিত প্রার্থীর নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করতে পারবে, যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপ বা বেআইনি আচরণ দ্বারা নির্বাচনী ফলাফল অর্জন করা হয়েছে বা উক্তরূপ ফলাফল অর্জনের জন্য উক্ত কার্যকলাপ বা আচরণ করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট বা অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পরস্পর যোগসাজশে কোনো দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপ বা বেআইনি আচরণ করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি পরাজিত মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ