বিএনএ, কুবি (কুমিল্লা) : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শনিবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ অর্ধশতাধিক মোটরবাইকে করে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং বঙ্গবন্ধু হলে প্রবেশ করে। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফুরণের শব্দ শোনা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর প্রধান ফটক থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পর্যন্ত মোটরসাইকেল শো-ডাউন করেন তাঁরা। শহিদ মিনার থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় হলের দিকে ককটেল বিস্ফুরণ ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়া হয়। এসময় সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের (২০১৭ সালের কমিটি) অনুসারীদের বের হয়ে আসতে বলেন। তারা একটি গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা-ই-এলাহীর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে। এক পর্যায়ে তারা হলের নিচে থাকা সাইকেল ভাঙচুর করেন। প্রায় ২০ মিনিট ক্যাম্পাসে অবস্থান করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দীকী ও হল প্রভোস্টরা এসে তাদের সরিয়ে নেয়। পরে ইলিয়াসের অনুসারীরা তাঁদেরকে প্রতিহত করতে গেলে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। এসময় রামদা, হকি স্টিক ও লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে দেখা যায় তাদের। প্রধান ফটকের সামনে এসে তারা প্রক্টরের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এবিষয়ে রেজা-ই-এলাহী বলেন, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামালকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল দিয়েছি। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে ঘোলাটে করার জন্য তারা (ইলিয়াসের অনুসারীরা) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত করার পরও তারা বিষয়টিকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর ক্যাম্পাসের যে কেউই আমার নামে স্লোগান দিতে পারে। সবজায়গায় আমার অনুসারী আছে।
ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের কালোরাত্রি ছাড়া হলের ভিতরে ঢুকে গুলি করা, ককটেল মারা, পুলিশ এবং প্রক্টরের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাস গেইট অতিক্রম করে হলের (বঙ্গবন্ধু) দু’তলায় উঠে যাওয়া, প্রক্টরের পাশেই ককটেল ফোটানো, এটি বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে। এখানে তিন-চারজন সাবেক ছাত্র এবং একজন রানিং ছাত্র, অটোচালক, সিএনজি চালক, বহিরাগত, বিভিন্ন মামলার আসামী ছিল।’
তিনি আরও বলেন, আমরা কুবি প্রশাসনকে বলব ছেলেদের দুপুরে ঘুমানোর যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারণে তাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রসহ প্রশাসনের লোকের সামনে কিভাবে ক্যাম্পাসে ঢুকে। যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে এজাহারভুক্ত মামলা করতে হবে। তা না হলে সব শিক্ষার্থী সাথে নিয়ে আমরা কঠিন আন্দোলনে যাবো, দরকার হলে আমরণ অনশন করবো।
এবিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রভোস্টদেরকে নিয়ে বসেছি এবং উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ থাকবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি তাদের সাথে কথা বলতেছি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি করা হয়। তবে শুরু থেকে কমিটি বিলুপ্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপ। সভাপতির পক্ষ থেকে কমিটি বিলুপ্তের কথা বলা হলেও সাধারণ সম্পাদক বলছেন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি। এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিবাদমান দুইটি গ্রুপ কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান করছেন। এতে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিএনএনিউজ/হাবিবুর রহমান/ এইচ.এম।