32 C
আবহাওয়া
১২:৪৮ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » গোপন মিশনে হাস! প্রধান বিচারপতির অধীনেই নির্বাচন! 

গোপন মিশনে হাস! প্রধান বিচারপতির অধীনেই নির্বাচন! 


বিএনএ, ঢাকা : গত এক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠেছে। বিএনপির চেয়ারপসনের সাবেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্টের পিছনে ‘কালো শক্তি’ হিসাবে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে আখ্যায়িত করার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ির সামনে মব সৃষ্টি, পরবর্তীতে তার বিএনপির সব পদ স্থগিত করা, ‘মঞ্চ ৭১’ এর অনুষ্ঠানে মব সৃষ্টি এবং আলোচকদের মারধর, পুলিশে হস্তান্তর, সন্ত্রাস দমন আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম সহ ১৬ জনকে কারাগারে আটক, গণ অধিকার পরিষদ মব সৃষ্টি করে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা, পরবর্তীতে ভিপি নুরুল হক নূরকে সেনা-পুলিশের যৌথ লাঠিপেটা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে অবরুদ্ধ করা, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের লাইব্রেরীতে তালাবন্ধ করে রাখা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে রক্ষক্ষয়ী সংর্ঘষসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে এসে ঠেকেছে।

দেশের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে চীন সফর শেষে দেশে এসেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। দেশে এসেই তিনি গত ৩১শে আগস্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে তার গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোন পক্ষই মূখ খুলেননি। নিশ্চিত করেননি সত্যতা।

YouTube player

এই অবস্থায় পহেলা সেপ্টেম্বর আগস্ট সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুজব গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এসব গুজব-গুঞ্জন নিয়ে বিচলিত হওয়ার মতো কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সেনাপ্রধানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে জনমনে নানা জল্পনা চলছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. আসিফ নজরুল বলেন, সেনাপ্রধান প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন—এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। আমি মাত্র দু-একটি পত্রিকায় এটি দেখেছি। অনলাইনে এ নিয়ে নানা গুজব-গুঞ্জন দেখেছি। তবে এসব নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে তা করা হতে পারে। আর বর্তমান বিচারপতির মেয়াদকাল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে তার আগেও পদত্যাগ করতে পারেন। সে হিসেবে বর্তমান বিচারপতিই হতে পারেন জানুয়ারি ২০২৬ পরের নির্বাচনকালী সরকারের প্রধান । তার অধীনেই হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরেই অংশ হিসেবেই জেনারেল ওয়াকার -উজ-জামান-প্রধান বিচারপতি রেফাত আহমেদের বৈঠক হতে পারে।

এদিকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সেনা প্রধানের বৈঠকের গুঞ্জনের সূত্র ধরে, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বিস্ফোরণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণপন্থীর উন্থান ঠেকাতে এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন করতে দিল্লির নির্দেশনায় নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে।

এদিকে পতিত আওয়ামী লীগ এই প্রথম জেনারেল ওয়াকারের সমর্থনে প্রথমবার প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি – জেনারেল ওয়াকার বৈঠকের ঠিক একই সময় দলটির ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত বিবৃতি বলা হয়েছে, সম্প্রতি সেনাপ্রধানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও অবমাননাকর মন্তব্য ছড়ানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে হেয় করে দেশের ভেতরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাইরের বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার নোংরা ষড়যন্ত্র চলছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যেসব দেশে সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা নষ্ট করা হয়েছে, সেসব দেশ অচিরেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তান, সোমালিয়া কিংবা সুদানের দিকে তাকালেই বোঝা যায় সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার পরিণতি কতটা ভয়াবহ। আজ বাংলাদেশে সেই একই নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। সেনাপ্রধানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান আসলে জঙ্গি ও অবৈধ অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর ঘৃণ্য পরিকল্পনার অংশ। একইদিন ধানমন্ডিতে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের জঙ্গি মিছিল হয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি এন জ্যাকবসনের দৌড়ঝাপ বেড়ে গেছে। সোমবার তিনি দেখা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে। ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন দেশের বর্তমান ‘মব’ পরিস্থিতি এবং নির্বাচনের সময় এর প্রভাব এবং কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরে সিইসি বলেছেন, জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের নির্বাচন একসঙ্গে হবে। তখন ওই ৩০০ জায়গাতেই ‘মব’ ভাগ হয়ে যাবে। যাঁরা মব সৃষ্টি করেন, তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবেন। তখন একসঙ্গে এত লোক একত্রে আর পাওয়া যাবে না। যাঁরা মব সৃষ্টি করতে চান বা মব সৃষ্টি করবেন, তাঁরা নির্বাচনের সময় সুবিধা করতে পারবেন না। প্রধান নির্বাচন কমিশনের এমন মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এক সপ্তাহের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনি। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার অতি-সক্রিয়তার বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারেনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে বিরোধী দলগুলোর কাছে রীতিমতো ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন হাস।

বহুল আলোচিত এই মার্কিন কূটনীতিক এমন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন যখন আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। গত দুই মাসে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ে ২০টিরও বেশি বৈঠক হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, পিটার হাসের এবারের ঢাকা সফরে পূর্ব বন্ধুত্বের সূত্রে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, এসব ঘটনাকে কাকতালীয় বলতে নারাজ। বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী সরকারে কারা ক্ষমতাসীন হবেন ভূ- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অতি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ভারত, পাকিস্তানসহ পশ্চিমা বিশ্বের পরাশক্তি গুলো দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। এসব পরাশক্তি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডার দাবার গুটি হিসাবে ব্যবহার করছে।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব/ এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ