বিএনএ, বিশ্ব ডেস্ক : পাকিস্তানে ১৪লাখের বেশি নিবন্ধিত আফগান শরণার্থী রয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই প্রায় ৪০বছর আগে সে দেশে প্রবেশ করেছিল।১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করলে তখন তারা সেখানে আশ্রয় নেয়। ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের পর আরো কয়েক লক্ষ মানুষ তাদের সাথে যোগ দেয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)২০০২ সালে পাকিস্তানে ত্রিশ লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছিল বলে জানায়।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হলে অনেক শরণার্থী দেশে ফিরে আসেন।
আবার তালেবানরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন জেলা ও প্রদেশ এবং শেষতক রাজধানী কাবুল দখল করে নিলে আবারো লক্ষাধিক আফগান সীমান্তবর্তী দেশ এবং বিমানযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। এতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আফগান শরণার্থীরা।
যারা দেশ ও স্বজনদের মায়া ত্যাগ করে প্রাণ রক্ষায় পালাতে বাধ্য হয়েছে তাদের রয়েছে অবর্ণনীয় দু:খ কষ্ট্রের অব্যক্ত কাহিনী।সুযোগ পেলে তারা তা অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রকাশ করে।
আজিম(বয়স ২৩)
মোহাম্মদ আজিম একজন জাতিগত তাজিক, যিনি কাবুলে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জনের সময় একটি বেকারিতে কাজ করতেন।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তালেবানরা তার দুই বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর আজিম রাজধানী কাবুল থেকে পালিয়ে যায়।
তিনি এবং তার বন্ধুরা মাত্র ২০ডলারের বিনিময়ে ২০১৬ সালে আফগান বাহিনীকে ওই এলাকায় তালেবানদের আস্তানা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিলেন। তালেবান যোদ্ধারা তাদের ঘিরে ধরার সময় তারা একসাথে ছিল।যোদ্ধারা নির্যাতনের আগে যুবকদের ছবি তুলেছিল।
“তারা আমার চোখের সামনে তার বন্ধুর নাক এবং তার কান, আঙ্গুল এবং পায়ের আঙ্গুল কেটে দেয়। আমি সেখান থেকে পালাতে পেরেছি, ”আজিম বলেন।
সেদিনের কথা মনে পড়লে তার মুখ দিয়ে কথা বের হতে চায় না। তিনি চারপাশে তাকান কেউ তার কথা শুনছে কি না। তার কণ্ঠ ভেঙে যায়, কিন্তু তবু সাংবাদিকদের সে কাহিনী সে বর্ণনা করে।
তালেবানরা আফগান রাজধানী ঘেরাও করার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ১৭ আগস্ট কাবুল থেকে পালিয়ে যাযন আজিম।
আজিম দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে। পাকিস্তান অনেক দূর। আজিমের বাবা ছেলের গাড়িভাড়া দিতে প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন।দুই দিন এবং তিন রাত বিরতিহীন ভ্রমণের পর পাক-আফগান সিমান্তে পৌঁছান আজিম।
পাকিস্তানি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রক্ষীরা প্রথমে তাকে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেছিল কারণ তার কাছে আইডি কার্ড বা শরণার্থী কাগজপত্র ছিল না।
“আমি তাদের সাথে থাকা চিকিৎসার কাগজপত্র দেখিয়েছি,” তিনি বলেন, “[আমি] বলেছিলাম আমি আমার জীবনের জন্য এখানে এসেছি, দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। আমার জীবন বিপন্ন, তালেবানরা আমাকে অনুসরণ করছে।
তিনি যথেষ্ট ভাগ্যবান যে তাকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু এখন নিজেকে খুব নি:স্ব মনে হয়। একটি অদ্ভুত দেশ। যেখানে তার ভাষা কেউ বুঝে না এবং সেও অন্যের ভাষা বুঝে না।
তিনি করাচিতে তার প্রথম কয়েক দিনের অবস্থান সম্পর্কে আল জাজিরাপ্রতিনিধিকে বলেন, “আমি বাস স্টেশনের কাছে মসজিদের বাইরে ঘুমিয়ে ছিলাম কারণ আমি জানি না কোথায় যেতে হবে এবং কার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।”
“একজন রিকশাচালক আমাকে এই চত্বর সম্পর্কে বলেছিল এবং বলেছিল যে এখানে আরো শরণার্থী আছে, কিন্তু আমি জানি না কার সাথে কথা বলতে হবে।”
“আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, আমার ভাগ্য কি হবে?” সে প্রশ্ন করলো। “কারণ আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলাম। আমি শিখতে চাই এবং আমি কিছু করতে চাই।
আফগানিস্তানের ইতিহাস বড়ই করুণ।আবার অনেক বীরও সেখানে জন্মেছে।দেশটিতে যেমন অনেক রাজা বাদশা আর সেনাপতিদের সমাধি রয়েছে তেমনি দেশটি ছিল রাজা মহারাজাদের খেলার মাঠ। রণ ময়দান।কয়েকশত বছর ধরে সাধারণ আফগানরা যুদ্ধ-কলহে বার বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।বছর বছর প্রাণ দিয়েছে অকাতরে শত শত আফগান যুবক।ক্ষমতার জন্য হত্যা দেশটিতে যেন একটা রেওয়াজ হয়ে পড়েছে।
কেউ আঞ্চলিক ক্ষমতা রক্ষা, কেউ দেশের রাজনীতির জন্য বার বার দেশের মাটিতে আগুন নিয়ে খেলেছে।গোত্র, আঞ্চলিক স্বার্থ আর বিদেশিদের যড়যন্ত্র সবমিলিয়ে গত ২শ বছর ধরে জ্বলছে আফগানিস্তান।গত ৪০বছরের গৃহ যুদ্ধ এর ফলাফলও জিরো। এ সময় দেশটির ১/২টি প্রজন্মকে বিদ্রোহী বানিয়েছে। লাখ লাখ তরুণ যুবকের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে রাজনীতিকে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ দেখানো হয়েছে।বিদেশি তথাকথিত শান্তিকামীরা দেশটিতে ডিভিশন কর, শাসন কর নীতি চালিয়ে দেশটিকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানানোর চেষ্ঠা করেছে। কেউ স্থায়ী শান্তি সমঝোতা ও ভাগ্যের পরিবর্তন হোক আফগানদের সেটা চায় নি।
বিদেশি পত্রিকা অবলম্বনে ।
সম্পাদনায়:জিএন