বিএনএ, চট্টগ্রাম: অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলে করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১ শতাংশেরও কম। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) গবেষণায় এমন চিত্র উঠে আসে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ।
সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে এক দল গবেষক দীর্ঘ দুইমাস ধরে গবেষণা করেন। গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. মোহাম্মদ খালেদ মোশাররফ হোসেন, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. তানভীর আহমদ নিজামী। গবেষণায় তারা চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকা গ্রহণকারী ও টিকা গ্রহণ না করা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তুলনামূলক স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল্যায়ন করেন।
সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, এই ধরনের উচ্চ গবেষণা বৃহৎ পরিসরে পরিচালনা করার মাধ্যমে টিকা প্রয়োগের পরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসের বিশদ তথ্য পেতে সহায়ক হবে যা বিশ্বব্যাপি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি জানান, সিভাসু ও চাঁদপুর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে মোট ১২ হাজার ৯৩৬ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ২১৩৭ (১৬.৫২%) জনের শরীরে নোভেল করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে কন্টাক্ট ট্রেসিং এর মাধ্যমে মোট ১০৯৫ জনের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত সম্পূর্ণরূপে পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯৬৮ জন কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে, ৬৩ জন এমন ব্যক্তি পাওয়া যায়, যারা বিভিন্ন সময়ের মধ্যে নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ডের শুধুমাত্র ১ম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন এবং ৬৪ জন ১ম ও ২য় উভয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেছিলেন।
গবেষণায় আরো পাওয়া যায় যে, সংগৃহীত সমস্ত নমুনার মধ্যে ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহনকারীদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের হার মোট নমুনা পরীক্ষার যথাক্রমে ০.৪৮ এবং ০.৪৯ শতাংশ ছিলো।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, কোভিড-১৯ টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১৩৭ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। যেখানে ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে যথাক্রমে ৭ জন ও ৩ জন রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত টিকা অগ্রহণকারী রোগীদের ৮৩ জনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট পরিলক্ষিত হয় এবং তাদের মধ্যে ৭৯ জনের অতিরিক্ত অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা সর্বনিম্ন ৭০% পরীলক্ষিত হয়।
অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক (৯৬.৭%) পাওয়া যায়। উপরন্তু, টিকা অগ্রহণকারি হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে ৭ জনের আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়, অপরদিকে টিকা গ্রহণকারি রোগীদের কোন ধরণের আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়নি।
টিকা অগ্রহণকারি রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সময়কাল সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে। গবেষণায় পাওয়া যায়, সর্বমোট ১০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তারা কেউই ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহণ করেননি।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, যে সমস্ত টিকা অগ্রহণকারি কোভিড-১৯ রোগী পূর্বে থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় (কো-মরবিডিটি) ভুগছিলেন তাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণের হার ছিলো ৭৬.৭ শতাংশ, যা টিকা গ্রহণকারিদের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ পরিলক্ষিত হয়।
বিএনএনিউজ/মনির