27 C
আবহাওয়া
১:৩৬ অপরাহ্ণ - জানুয়ারি ৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » ভারত বাংলাদেশে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাবে!

ভারত বাংলাদেশে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাবে!


বিএনএ ডেস্ক : গত শুক্রবার থেকে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর উস্কানি দিচ্ছে। বিশেষ করে লালমনিরহাট বাংলাদেশ বিমান ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়টি সামনে এনে কথিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা আপারেশনের কথা প্রচার করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এই শব্দ দুটো নিয়ে বেশ কৌতূহল রয়েছে।

সামরিক পরিভাষায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ কোনও যুদ্ধ নয়। কোনো দেশের সেনাবাহিনী ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামের হামলা অতর্কিতভাবে চালায়। এ নিয়ে কোনো পূর্ব ঘোষণা দেওয়া হয় না। খুব অল্প সময়ে, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শত্রুদের গোপন আস্তানায় বা দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে চালানো হয় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’।

হামলা চালিয়ে শত্রুদের ঘাঁটিগুলোকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেনাবাহিনী আর ওই এলাকায় মোতায়েন থাকে না বা ওই এলাকা দখল করে না। হামলার উদ্দেশ্য সফল হলেই সেনারা নিজ ডেরায় ফিরে আসেন। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়ে শত্রুদের আটক বা গ্রেপ্তারও করা হয় না। মোদ্দা কথা একেবারে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানাই হলো ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কম রেখে লক্ষ্য পূরণ করাই হলো এ হামলার মূল উদ্দেশ্য। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র মূল মন্ত্র হলো নিশানাকে নির্ভুলভাবে বেছে নেওয়া। ‘এটা না হলে, ওটা’ বা ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর মেথড’ এখানে খাটে না।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল শংকর প্রসাদ বলেন, ‘এটি একটি জটিল অপারেশন। এ হামলা চালাতে খুব সাহস ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন। এ হামলা চালানো খুব শক্ত কাজ। লক্ষ্যমাত্রা অস্থাবর থাকে। এর অর্থ হলো লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই ফিরে আসা। এ দলের প্রত্যেক সদস্যদের নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব থাকে।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর বড় উদাহরণ হল পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে, মার্কিন নেভি সিলের অপারেশনে রাতের অন্ধকারে নিহত হয়েছিল ওসামা বিন লাদেন।

বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই কোনও না কোনো সময়ে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়। ২০১৫ সালে মণিপুর রাজ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায় নাগা জঙ্গিরা। এরপরই মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলে সীমান্ত পেরিয়ে ওই দেশের জঙ্গলে ঢুকে জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনারা। এর এক বছর পর ভারত ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়।

গত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্ষমতাসীন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার, কট্টর ইসলামী সংগঠনের অনেক নেতাদের কারামুক্ত করে দেয়। তাদের একজন আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রতিষ্ঠাতা জসীমুদ্দিন রাহমানি। তিনি ভারতের শিলিগুড়ি শহরের কাছে অবস্থিত চিকেন নেক খ্যাত করিডোর বন্ধ করে দেওয়া, বিভিন্ন রাজ্যের বিচ্ছন্নতাবাদী আন্দোলনকে উস্কে দেয়ার পাশাপাশি দিল্লী দখলের ঘোষণা দিয়েছেন।

ভারত এই ধরনের হুমকিকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতির প্রতিধ্বনি বলে মনে করছে। তাছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখির বিষয়টি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে ভারত। সেকারণে ভারতীয় গণমাধ্যম গুলো সার্জিক্যাল স্টাইক বা মিলিটারি অপারেশনের বিষয়টি সামনে এনেছে।

এদিকে বাংলাদেশ-ভারতের কুটনৈতিক সর্ম্পকের তিক্ততার বিষয়টি ওঠে এসেছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যে ।

শনিবার রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক: প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক তিক্ততার জন্য ভারতের গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের মিডিয়া হঠাৎ করে একেবারে যেন ভয়ংকরভাবে লেগে পড়ল আমাদের বিরুদ্ধে। আমি এটা স্পষ্টভাবে এবং খোলাখুলিভাবে বলেছি, বিভিন্ন বিবৃতিতে সেটা উল্লেখ করেছি। ভারতের মিডিয়া যে ভূমিকা নিয়েছে, সেটা কোনো অবস্থাতেই দুটি দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক নয়।

গ্লোবাল ফায়ারের ২০২৪ সালের নভেম্বরের তথ্যানুসারে বিশ্বে সামরিক শক্তির বিচারে ১৪৫ দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৪র্থ। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭ তম। তারপরও অনেকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের কথা বলেন! যা হাস্যকর।ভারতের হাতে রয়েছে ১১০ থেকে ১২০টি পরমাণু বোমা। সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ২১ লাখ ৪০ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিলবে ৩১ কোটি সেনা।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে সক্রিয় সেনা রয়েছেন আনুমানিক এক লাখ ৬০ হাজার। বিমান বাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪শত, এছাড়া নৌসেনা রয়েছে ২৫ হাজার একশত জন।

ভারতের স্থলবাহিনীর হাতে রয়েছে ৪ হাজার ৪২৬টি ট্যাঙ্ক। সামরিকযান রয়েছে ৫ হাজার ৬৮১টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ২৯২টি।বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ট্যাংকের সংখ্যা ৩২০টি। সামরিক যান রয়েছে ১৩ হাজার ১০০টি।

ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ২ হাজার ২১৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০এমকেআই, ব্রিটেন-ফ্রান্সের তৈরি জাগুয়ার এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ ২০০০।

পক্ষান্তরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১৬টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৪৪টি, হেলিকপ্টার ৭৩টি, পরিবহণ বিমান ১৬টি ও প্রশিক্ষণ বিমান ৮৫টি। বিশেষ অভিযানের জন্য রয়েছে চারটি যুদ্ধবিমান।

ভারতের নৌবাহিনীর রয়েছে ১৫টি সাবমেরিন, ১৫টি ফ্রিগেট, ১১টি ডেস্ট্রয়ার এবং বিমানবহনকারী জাহাজ ২টি।
অপরদিকে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর রয়েছে ফ্রিগেট সাতটি, করভেট ছয়টি, সাবমেরিন দুটি, টহল নৌযান ৩০টি এবং মাইন ওয়ারফেয়ার রয়েছে পাঁচটি।

রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা মিলিটারি অপারেশন অতীতেও হয়নি। তবে ভবিষ্যতে হবে না এমন সম্ভাবনাকে নাকচ করা যায়না। ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে ভারত সরে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয় থাকা কট্টর মৌলবাদীদের লাগাম টেনে ধরতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ইস্যুতে থিসিস- সিনথিস- অ্যন্টিথিসিস থিওরি প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে এতে কেনো সন্দেহ নেই।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব/এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ