বিএনএ বাগেরহাট: দস্যুতা থেকে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মামলা প্রত্যাহার করার আশ্বস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্য সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে-জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সোমবার (১ নভেম্বর) বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে র্যাবের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কেউ যদি আবারও দস্যুতায় ফিরে যেতে চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুন্দরবনকে আর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে দেয়া হবে না। সেখানে র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প করা হচ্ছে। যারা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামিতেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তবে কেউ যদি মনে করেন আবার আগের পেশায় ফিরে যাবেন, তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে র্যাব এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি করছে বলে জানান তিনি।
সনাতন ধর্মাম্বলম্বীদের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ। এই জায়গায় হিন্দুদের দুর্গাপূজার সময়ে গুজব তৈরি করে একটি বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি করতে চেয়েছিল অশুভ শক্তি। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। যারা মনে করেছেন দেশে অস্থিরতা বৃদ্ধি করে সফল হবেন, তাদের সেই আশায় গুড়েবালি পড়েছে। শান্তির এই দেশে কাউকে কোনভাবেই অরাজকতা করতে সৃষ্টি করতে দেয়া হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে যারা খুন ও ধর্ষণ মামলার আসামি, তাদের ব্যাপারে কিছু করার নেই। বাকিদের মামলা নিষ্পত্তিতে আইনানুগ সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি। যারা খারাপ পথ থেকে ফিরে এসেছেন তাদের বুকে টেনে নিতে স্থানীয়দের প্রতি অনুরোধ জানান আইজিপি।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তবে কাউকে আবার ভুল পথে পা বাড়াতে দেয়া হবেনা। সুপথে থাকলে র্যাবও তাদের সঙ্গে থাকবে। পুরনো পেশায় কেউ ফেরার চিন্তা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, সুন্দরবনে নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে। নতুন কেউ যাতে দস্যু বাহিনী গড়ে তুলতে না পারে, সে জন্য র্যাব সচেষ্ট রয়েছে। যারা বিপথে যাওয়ার চেষ্টা করবে তারা কোনোও ছাড় পাবেনা। তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার তৃতীয় বছর ও আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন উপলক্ষে রামপালে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে র্যাব। অনুষ্ঠানে র্যাবের পক্ষ থেকে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩১৮ জনকে ১০২টি ঘর, মালামালসহ ৯০টি মুদি দোকান, ১২টি জালসহ মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ২২৮টি গবাদি পশু বিতরণ করা হয়।
র্যাবের এই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু ও সদস্য পীর ফজলুর রহমান, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র্যাবের প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গোড়াপত্তন ঘটে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার। ২০১২ সাল হতে লিড অ্যাজেন্সি হিসেবে র্যাবের জোরালো অভিযানে কাণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। উপর্যুপরি অভিযানে ফেরারি জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেন জলদস্যুরা।
প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও র্যাবের ব্যবস্থাপনায় ২০১৬ সালের ৩১ মে হতে ১ নভেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেন। ফলে সম্পূর্ণরূপে জলদস্যু মুক্ত হয় সুন্দরবন। ১ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে এই সাফল্যের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনএনিউজ/আরকেসি