বিএনএ, ঢাকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা ছিলেন যিনি বাঙালিকে দিয়েছিলেন একটি ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র। শুধু বাংলাদেশেই না আদর্শিক ও নেতৃত্বগুণে তিনি বিশ্ব নেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন । ইতিহাসের পাতায় বিশ্বের অন্যতম আলোচিত নেতা হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত।
কেউবা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন, কেউবা মুগ্ধ তাঁর ব্যক্তিত্বের কথা জেনে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি দেখে, তাঁর সাদাসিধে জীবনযাপনের কথা জেনে কেউ কেউ রীতিমতো বিস্মিত।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলতে গিয়ে কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তার ব্যক্তিত্ব ও নির্ভিকতা হিমালয়ের মতো। এভাবেই তার মাধ্যমে আমি হিমালয়কে দেখেছি।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’
মালয়েশিয়ার জনক ও মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলও বাংলাদেশকে চিনতো বঙ্গবন্ধুর নামে। বাঙালির জাতির মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধুকে খুনের ঘটনায় বিশ্ববাসী এই জাতি সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়ে।
মাহাথির মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘আফ্রিকার কোটি কোটি কৃষ্ণ মানবের মুক্তিদূত নেলসন ম্যান্ডেলার সমকক্ষ তোমাদের নেতা (বঙ্গবন্ধু)। তার অবর্তমানে বাংলাদেশ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে এবং এতিমের মতো অবহেলা ও অবজ্ঞার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। জন্মের পরপরই বাংলাদেশ অভিভাবকহীন ও নেতৃত্বহারা হয়ে পড়ায় এই দেশটির যে বিশাল সম্ভাবনা ছিল, তা রুদ্ধ হয়ে পড়ে। তোমাদের জাতির ভাগ্যে এতবড় ট্রাজেডি দেখে খুব আফসোস হয়।’
ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রানচিস মিতেরা বলেন, ‘তোমাদের দেশের অদৃশ্য শক্তিধর এই লোকটির কী অজানা জাদু ছিল! দেখো, আমাদের ফ্রান্সের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর নেপোলিয়ান বোনাপার্ট দি গ্রেট। তিনি ফ্রান্স থেকে বহু দূরে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে বন্দি হয়ে পড়েন, তোমাদের শেখ মুজিবের মতো বন্দি হওয়ার পর আমাদের জাতীয় বীর ফরাসি জাতির জন্য বা ফ্রান্সের জন্য আর কোনো অবদান রাখতে পারেননি। কিন্তু তোমাদের ভাগ্য-নির্মাতা (বঙ্গবন্ধু) তোমাদের দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে, অন্য দেশের কারাগারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ডেথ সেলে বসেও, শুধু তার নামের অজ্ঞাত জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটা নিক্ষেপ করে, পৃথিবীর ভৌগোলিক রেখা পরিবর্তন করে, একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় ঘটান এবং একটি নতুন জাতির জন্ম দেন।’
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশের সময় বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে এসব কথা বলেন মিতেরা।
কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বাবা দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে ১৯৭০ এর দশকেই বাঙালি জাতিকে নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধে লিপ্ত হবেন, আশির দশক পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না, এমন গোয়েন্দা তথ্য উপ-রাষ্ট্রদূত অফিসের গোয়েন্দা মারফত আমরা পেয়েছিলাম। সেটার ব্যাখ্যা সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আমরা তা সংগ্রহ করতে পারিনি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সংগ্রহ করা সেই ব্যাখ্যায় আমরা জানতে পারি যে, আশির দশকের পর রাশিয়ার রেড আর্মি থাকবে না বলে বিশ্বাস করতেন তিনি। তখন পৃথিবীর ভারসাম্য একদিকে (যুক্তরাষ্ট্রের দিকে) হেলে পড়বে, আর তারা পাকিস্তানের একনিষ্ঠ সমর্থক। সেই পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি ১৯৭০ সালেই যুদ্ধ শুরু পরিকল্পনা করেছিলেন। তার সেই পূর্বাভাস ও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বিশ্বের বড় বড় নেতারা বিস্মিত হয়ে পড়েন। তাই তারা ১৯৭২ সালে তার কাছে তার দৈবদৃষ্টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন।’
ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।’
হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজী ও গতিশীল নেতা আগামী ২০ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।’
ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন, ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।’
নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট বলেছিলেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’
বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার সংবাদ শুনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এতটাই দুঃখ পেয়েছিলেন যে, তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমারই দেয়া ট্যাংক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করলে! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।’
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।