বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৭
কবিতাটির প্রথম অংশে দেখা যাচ্ছে একজন জার্মান ফ্যাসিস্ট ক্যাপ্টেন ভের্নের গর্ভবতী একজন রুশ মহিলাকে উলঙ্গ করছে। কারণ, সেই রুশ মা ছিলেন গেরিলা দলের সদস্য। তাই এই নির্মম অত্যাচার। শহীদ সাবের লিখেছেন:
মাগো, মা কাঁদছো তুমি?
আমাকে একবার দেখো,
দেখো, আমি স্থির, অটল,চোখের পাতাটি নড়ছে না।
চেয়ে দেখ, আমার হাতে মলাটের বই,
কারা-প্রাচীরের অন্তরালে, লুকিয়ে আনা বইটি।
এখন আমার চোখে ভেসে উঠেছে
সেতো তোমারই ছবি মাগো।
কি সেই ছবি? ছবিটি দেখুন:
চারদিকে রক্ত জমানো হিমেল মৃত্যু
আর তুমি দাঁড়িয়ে আছ জার্মান কমাণ্ডারের সামনে
মাগো ক্যাপ্টেন ভের্নের কি বুঝবে বলো?
কেন তুমি যোগ দিয়েছ গেরিলা দলে?
স্বদেশ প্রেমের আগুন কত জ্বলে
পররাষ্ট্র লোভী নাৎসীরা কি বুঝবে তা।
না, শুধু হিটলারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী নয়। বোঝেনি ইয়াহিয়ার ফ্যাসিস্ট জল্লাদ সেনারাও। শহীদ সাবের তারপর লিখেছেন দ্বিতীয় দৃশ্য। ফ্যাসিস্টরা ধরে নিয়ে গেছে গর্ভবতী মাতাকে। পথেই তার সন্তান হল। মায়ের কোল থেকে দস্যুরা কেড়ে নিল নবজাতককে।
তারপর আমি দেখছি পরিস্কার
সেই হাড় কাঁপানো শীতের রাতে,
সেই দু:সহ শীতে তুমি উলঙ্গ, মাগো তুমি উলঙ্গ
সেই বরফের আস্তরণের উপর দিয়ে ধীর পদক্ষেপে
তুমি হেঁটে চলেছ মাগো, পেছনে বেয়োনেটের ডগা
ছুঁয়ে আছে পিঠেতে তোমার,
দস্যুরা হাসছে মাগো, মাতৃমূর্তির নগ্নতায়,
তোমার সন্তান ভরা পেট ঝুলে পড়েছে মাগো
খোঁচায় খোঁচায় ক্ষত-বিক্ষত তোমার শরীর।
তুমি এখন জন্ম দিচ্ছ একটি সন্তানের
কি দারুণ যন্ত্রণা বলো:
একটি ক্ষুদ্র লাল মাংসপিণ্ড: আগামী দিনের
এক সর্বহারা সেনা বেরিয়ে আসে ধীরে।
তারপর ভের্নের ডেকেছে তোমায়
শিশুটি ছিনিয়ে নিল তোমার কোল থেকে।
শয়তান তোমার ছেলের জান কবজের দিক হুমকী
মাগো, তুমি, মা- তোমার একটি কথার পরে
করছে নির্ভর অসংখ্য তরুণ গেরিলার প্রাণ
তুমি তো জননী, বলবে না একটি কথাও।
না, জননী একটি কথাও বলেননি। তাঁর চোখের সামনে তার সদ্যোজাত শিশুকে হত্যা করা হলো। পরে তিনি নিজেও প্রাণ দিলেন। বাংলাদেশের মা-বোনদের উপরে এমনি নির্যাতন চালিয়েছে ইয়াহিয়ার বর্বর সেনারা।……..
শহীদ সাবের লিখেছিলেন:
আর দেখো আমি কারাগারে
মাগো তুমি কেঁদো না, কেঁদো না
আমার জন্য কেঁদো না, দেখ দেখ
আমি স্থির, অটল…
না, শহীদ সাবেরের জন্য আমরা কাঁদবো না। বাংলাদেশের তিনিই প্রথম কবি যিনি ইয়াহিয়ার বর্বর ফ্যাসিস্ট সেনাদের হাতে প্রাণ দিলেন।……..(অধ্যাপক আবদুল হাফিজ রচিত)
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৯৬) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬০
গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী