28 C
আবহাওয়া
৩:৪১ পূর্বাহ্ণ - অক্টোবর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

বাজেট

জাতীয় সংসদে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মঙ্গলবার(১১ জুন) সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বেশ বিতর্ক ও আলোচনা হয়েছে। সরকারি দল এবং তার সমর্থকেরা মোটাদাগে বাজেটকে ‘অসাধারণ’ বা ‘জনবান্ধব’ বলে আখ্যায়িত করলেও বিরোধী দল বাজেটকে সাধারণত ‘গণবিরোধী’, ‘অবাস্তব’ বাজেট বলে অভিমত দিয়েছে।

এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি ভালো বাজেটের সংজ্ঞা হলো, বাজেট তাদের ন্যায্য এবং সহনশীল মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারছে কি না। বাজেট মানে আর্থিক ভীতি!

অধিকাংশ গরিব, স্বল্প আয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্তের কাছে প্রত্যাশা হলো বাজেট ঘোষণার পর যাতে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনশীল এবং ক্রয়সীমার মধ্যে যাতে থাকে। কিন্তু এদেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজেটে কোনো ঘোষণা আসার আগ থেকেই বাজেটের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়াতে থাকে। ফলে সাধারণ মানুষ খুব বিপাকে পড়ে, যা আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখতে পাচ্ছি।

এর আগে গত ৬ই জুন ‘টেঁকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামে সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের প্রয়োজন ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি। এমতাবস্থায়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা -এ দু’টি আপাত বিপরীতমুখী লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু ভালো দিক হলো বরাবরের মতো এবারও কৃষি উপকরণ এবং সারের ওপর কোনো বাড়তি শুল্ক বসানো হয়নি। নির্মাণ সামগ্রীতে নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ করা হয়নি। মোবাইল ফোনের কল চার্জের ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানোর ফলে অপ্রয়োজনীয় ফোনালাপ কমে আসবে।

তাছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটের এডিপিতে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম খাতে বরাদ্দ বাড়ছে, যা দেশের সাধারণ জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

পক্ষে

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

‘উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রসঙ্গে সরকারের নানা উদ্যোগের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সঞ্চালনের পরিকল্পনা করেছি। এসব উদ্যোগের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ শতাংশে এবং মধ্যমেয়াদে ৭.২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা রাখছি।

তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতায় বরাদ্দ ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২.২ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের আইএমএফ মিশন চিফ ক্রিস পাপেজর্জিউ বলেছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ উচ্চহারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক সূচকের অনেক উন্নতি করেছে। একইসাথে দারিদ্র্য হ্রাস এবং এসডিজি সূচকের স্থিতিশীল অগ্রগতি অর্জন করেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৪ শতাংশ। তবে,  আমরা আগামী অর্থবছরে ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছি।

অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করা, বৃহত্তর জনকল্যাণ কিংবা রপ্তানি-কর্মসংস্থানকে বলশালী করতে নতুন বছরের বাজেটে অনেক ক্ষেত্রেই নানা রকম ছাড় দেওয়া হয়েছে।

একাধিক মোটরযানের মালিকদের ওপর বাড়তি পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে, যা একটি স্বাগত জানানোর মতো সিদ্ধান্ত। তবে একাধিক মোটরযানের জন্য বাড়তি সারচার্জের বিধান থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কম্পানিগুলোকে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই হয়তো এমন বিধান করা হয়েছে।

নতুন বছরের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের জন্য ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতায় প্রায় ৪২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৫.৩০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে বলা যায়, নতুন বছরে এ খাতে বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য জাতীয় বাজেটে এমন ধারাবাহিক নীতি-মনোযোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

যেকোনো অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুটো লক্ষ্য হলো দাম স্তর স্থিতিশীল রাখা এবং বেকারত্ব দূর করা বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

বিপক্ষে

এবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই খাতের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিলেও তা বিগত অর্থ বছরের তুলনায় বেশ কম।

এবারের বাজেটে করধাপে সর্বোচ্চ স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। যাদের মোট বাৎসরিক আয় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি তাদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ আয়কর প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় হলে সেই আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে।

জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের সূচনা করা হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য; কিন্তু মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে  ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন,

কিছুদিন আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট পথনকশা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেটিও দেখলাম না। এ ছাড়া বাজেট সামনে রেখে শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্টদের দাবি ছিল লভ্যাংশের ওপর থেকে দ্বৈত কর পরিহারের উদ্যোগ নেওয়া। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোম্পানিগুলো কর প্রদানের পর যে মুনাফা করে তা থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তারপরও ওই লভ্যাংশ প্রদানকালে কোম্পানির পক্ষ থেকে ১০ শতাংশ হারে কর কেটে রাখা হয়। এরপর এই আয় যখন বিনিয়োগকারীর আয়ে যুক্ত হয়, তখন তার ওপর আবার কর দিতে হয়। এভাবে লভ্যাংশের ওপর বারবার কর দেওয়ার বিধানটি বাতিলের দাবি করেছিলাম আমরা। কিন্তু সেই দাবিও পূরণ হয়নি।

বাজেটের আকার যাই হোক না কেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়বে।

প্রস্তাবিত বাজেটে কর আদায়ে ‘এনবিআর’-এর ওপর আরও বেশি চাপ থাকবে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এনবিআরকে সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

মোট কথা কার্যকরভাবে বিরাজমান ডলার সংকট মোকাবেলার ওপরই বহুলাংশে নির্ভর করছে নতুন অর্থবছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য কতটা সুরক্ষিত থাকবে। প্রবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অস্থায়ীভাবে শ্রমিকপেশাজীবী হিসেবে কাজ করতে গেছেন, তাঁরা যেন তাঁদের আয়গুলো ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নিয়মিত দেশে পাঠাতে উৎসাহিত হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ