বিএনএ, রাবি: সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার ও প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করায় সর্বাত্মক আন্দোলনে নেমেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা। এদিন সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতিও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে আজ ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষকদের সর্বাত্মক আন্দোলনের কারণে বন্ধ রয়েছে সকল বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা।
শিক্ষকদের সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: ১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভগ/ইনস্টিটিউটের ক্লাশসমূহ বন্ধ থাকবে; ২. অনলাইন, সান্ধ্যকালীন, শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাশসমূহ বন্ধ থাকবে; ৩. সবধরনের লিখিত, মৌখিক ও ভর্তি পরীক্ষাসহ কোন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না; ৪. বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ থাকবে। একাডেমিক কমিটি, পরিকল্পনা কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় ও অন্যান্য সভা অনুষ্ঠিত হবে না; ৫. ভর্তি পরীক্ষাসহ ডিন অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোন সিলেকশন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে না; ৬. কোন সেমিনার কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে না; ৭. দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন শিক্ষক প্রশাসনিক কোন দায়িত্ব পালন করবেন না; ৮. শিক্ষকগণ প্রতিদিন সকাল ১১.০০-১২.০০ মিনিট পর্যন্ত (ছুটির দিন ব্যাতিত) সিনেট ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের অনেক সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য হতে দেখেছি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিকভাবে না চলে তাহলে জাতির সামনে অঁঁশনি সংকেত অপেক্ষা করে। যেসকল মেধাবি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে তারা যদি মেধাবী শিক্ষক না পান তাহলে তারা দেশকে কিছুই দিতে পারবে না। মেধাবী শিক্ষক পেতে গেলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে হবে। যেন তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন। তাদের আকর্ষণ করার জন্য আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে; আরও কত সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করবেন। প্রতিবেশী অনেক দেশে শিক্ষকদের বেতন সাধারণ চাকরি থেকে অনেক বেশি৷ কিন্তু বাংলাদেশে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের কথা বার বার বলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি৷”
রাবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার তার বক্তব্যে বলেন, “জাতিকে ও দেশের জনগণকে জানাতে চাই, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এটা দেখবেন; এই সমস্যার সমাধান করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক রাস্তায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চায় না; তাদের বক্তব্য দেওয়ার জায়গা ক্লাসরুম, সেমিনার, ল্যাবরেটরিতে। আজ থেকে আমরা সব বন্ধ করে দিয়েছি; সব রকম কাজকর্ম থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। সব ধরনের ক্লাস বন্ধ রয়েছে, লিখিত ও ভাইভাসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে; সব ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বন্ধ রয়েছে; সব ধরনের গবেষণা বন্ধ রয়েছে; শিক্ষকদের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যেটাকে আমরা বলি সর্বাত্মক কর্মবিরতি।”
গত দুই মাস ধরে আন্দোলন চলছে উল্লেখ করে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান জানান, “ভেবেছিলাম এমন পরিস্থিতি আসবে যে আমাদের আর লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে যেতে হবে না। যেহেতু তেমন কিছু হয়নি, তাই আমাদের লাগাতার কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে এবং সরকারের অবস্থান খুব অনর বলেই মনে হচ্ছে। এজন্য আমাদের এটা আরও চালিয়ে যেতে হবে। গতকাল থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিষদও আমাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে।”
অবস্থান কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি শিক্ষকদের এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং আজ ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। আজ ১ জুলাই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
বিএনএ/সাকিব, এমএফ