20.7 C
আবহাওয়া
৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দূষণে মা মাছ মরছে হালদায়, দায়ী প্রভাবশালীরা!

দূষণে মা মাছ মরছে হালদায়, দায়ী প্রভাবশালীরা!


।। এনামুল হক নাবিদ ।।

দেশের অন্যতম মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। এ নদীতে সাম্প্রতিক সময়ে দূষণে মারা যাচ্ছে মা মাছসহ ডলফিন। । দেখা গেছে, হালদা নদীতে একের পর এক মা মাছ ও ডলফিন মরে ভেসে উঠছে। । গত এক সপ্তাহ ধরে এটি আশঙ্কাজনকভাবে দেখা দিয়েছে। মানবসৃষ্ট দূষণ ও ড্রেজারের আঘাতে হালদায় মাছ ও বিলুপ্ত প্রজাতির ডলফিন মরার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা। এহেন অবস্থায় তারা জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে মনে করছেন।

দেখা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে নদী থেকে দুটি মরা কাতলা মাছ উদ্ধার করা হয়। এ পর্যন্ত এক সপ্তাহে হালদায় একটি ডলফিনসহ ৫টি বড় মাছের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২২ ও ২৬ জুন দুটি বড় মরা কাতলা ও রুই মাছ ভেসে উঠেছিল উরকিরচরের বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায়। ২৬ জুন নদীর গড়দুয়ারা পয়েন্টে পাওয়া যায় মৃত একটি ডলফিন। গত শুক্রবার সকালে যে দুটি মৃত কাতলা মাছ পাওয়া যায় সেগুলো ভেসে উঠেছিল হাটহাজারীর মাদার্শা কুমারখালী এলাকায়।

এ দিকে হালদা নদীতে আবারও একটি মৃত কাতাল মাছ ভেসে উঠেছে। মাছটির আনুমানিক ওজন ২০ কেজি। রোববার (৩০ জুন) সকাল ১১টায় নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় মরা মাছটি দেখতে পান এলাকার লোকজন।

স্থানীয় বাসিন্দা রোশাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদীর দক্ষিণ দিক থেকে জোয়ারে ভেসে আসে কাতালটি। ভাটার কারণে সকাল ১১টার দিকে এটি আজিমের ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। মাছটির শরীরে দাগ রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

রাউজান উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হালদায় মা মাছ মরে যাওয়ার ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত যা মাছ মারা গেছে তা পুঁতে ফেলা হয়েছে। আজকে যেটি মারা গেছে তা ল্যাবরেটরিতে নেয়া হয়েছে।

এ দিকে হালদা ও পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলী নদী দূষণের উৎস চিহ্নিতকরণে গত ২৩ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর দপ্তর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ১৫ দিনের মধ্যে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি দূষণের উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ, মতামত ও পরিদর্শন প্রতিবেদন কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু আজ রোববার পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মা মাছ ও ডলফিনের এই মৃত্যুর মিছিল বঙ্গবন্ধু হ্যারিটেজ ঘোষিত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্রের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নদী দূষণ, মাছ শিকারের জন্য বিষ প্রয়োগ, রাবার ড্যামে জমে থাকা রাসায়নিক ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি এবং মা মাছ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার জীব- বৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। এ কারণে হালদায় মা মাছ ও ডলফিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদার এহেন অবস্থার জন্য দায়ী হালদা তীরবর্তী রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার মাছ চোরেরা। যারা রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। হালদা নদীতে দুই বছর পরে কয়েকদিনের ব্যবধানে চারটি মা মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু ঘটেছে। যা অস্বাভাবিক একটি ঘটনা।’

আরেক হালদা গবেষক চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আঘাত এটি হালদার বাস্তুতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। দেখেন গত এক সপ্তাহে মৃত বেশ কয়েকটি মা মাছ ও ডলফিন ভেসে ওঠেছে। এর মধ্যে দুইটির প্রথমটি হাটহাজারীর ১০ নং ওয়ার্ডের উত্তর মাদার্শার কুমারখালি ঘাটে যার দৈর্ঘ্য ৯৮ সে.মি. ও ওজন প্রায় ১৬ কেজি। অন্যটির কুমারখালী ঘাটের সামনে সুলতানা বাপের ঘাটে পাওয়া যায়। যার দৈর্ঘ্য ৮৫ সে.মি. ও ওজন প্রায় ১০ কেজি। প্রথম মাছটির কানকোর নিয়ে বঁড়শির আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় এবং দ্বিতীয় মাছটি পচে গলে যাওয়ায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়নি। ‘

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, এটা নিয়ে তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে আমরা রিপোর্ট জমা দেব। সেখানে আমরা বিস্তারিত উল্লেখ করব। তারপর একটা সিন্ধান্তে পৌঁছাব।

বিএনএনিউজ২৪ডটকম/হাসনা


শিরোনাম বিএনএ