।। কাইমুল ইসলাম ছোটন ।।
বিএনএ, রাঙামাটি: পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ছুটিতেও পর্যটক শুণ্যতায় ভুগছে পর্যটন নগরী রুপের রাণী খ্যাত রাঙামাটি। ছুটিতে পর্যটনের ভরা মৌসুমেও আশানুরুপ পর্যটক আসেনি রাঙামাটিতে। বেশ কিছু মাস যাবত পর্যটকের যে খরা চলছিল সেই ক্ষতি ঈদে পুষিয়ে নেয়ার আশা করলেও, সেই আশা পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন পর্যটক সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের বরণ করার জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশানুরুপ পর্যটক আসেন নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং কম হয়েছে। এদিকে পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কাপ্তাই হ্রদ। তারা বোটে করে কাপ্তাই লেকে ভ্রমণ করেন। কিন্তু লেকে পানির স্বল্পতা এবং পর্যটকদের হতাশাজনক উপস্থিতির প্রভাব পড়েছে রাঙামাটির ট্যুরিস্ট বোট সংশ্লিষ্টদের উপরও।
সরেজমিনে দেখা যায়, যথেষ্ট লোক সমাগম থাকলেও যাদের বেশিরভাগই স্থানীয় লোকজন। যারা ঈদ উপলক্ষে পরিবার পরিজনের সাথে সময় কাটাতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছেন। রাঙামাটির বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত নয়। অন্যান্য ঈদ মৌসুমে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি থাকলেও এবারের চিত্র যেন সম্পূর্ণই বিপরীত। শহরে দেখা যায়নি পর্যটকদের গাড়ির চাপ অথবা কাপ্তাই লেকে ভেসে বেড়াতে পর্যটকের পরিপূর্ণ ট্যুরিস্ট বোট। একই চিত্র রাঙামাটির টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতে। ক্রেতার সংখ্যা খুবই নগণ্য হওয়ায় বিক্রেতারা প্রায় অলস সময় কাটাচ্ছেন।
হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটি উপলক্ষে আমরা সবসময় বাড়তি একটা প্রস্তুতি রাখি। কারণ এই সময়টাতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয় রাঙামাটিতে। কিন্তু এবার আমরা খুবই হতাশ। যেমন পর্যটক আশা করেছিলাম তার অর্ধেক পর্যটকও আসেনি। আপাতত আমাদের হোটেলের ৬০ শতাংশের মত বুকিং আছে। আগামীকাল সেটা আরো কমে যাবে।
হোটেল গ্রীণ ক্যাসেলের ম্যানেজার মো. শরীফ বলেন, আমাদের এখানে মোট ৩৭টি রুম রয়েছে। কিন্তু এখন রুম খালি আছে প্রায় ১৮টির বেশি। সুতরাং আমাদের বুকিং ৫০ শতাংশের বেশি নয়। আমরা আরো অনেক বেশি পর্যটক সমাগম হবে আশা করেছিলাম।
একই কথা বলেন হোটেল মতি মহলের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শফিউল নেজাম। তিনি জানান, ঈদের মৌসুম যেকোন পর্যটন শহরের জন্য ব্যবসার মৌসুম। কিন্তু এবারের ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সত্যিই হতাশাজনক।
রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার এবং ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, ঈদের জন্য আমরা খুব ভালো একটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের আশা অনুযায়ী পর্যটক আসেনি। সকালের এমন সময়ে প্রায় ২০-৩০টি ট্যুরিস্ট বোট ট্যুরিস্ট নিয়ে লেক ভ্রমণে বের হওয়ার কথা। সেখানে ১০টি বোটও এখনো ভাড়া হয়নি। তাই অনেক বোট চালকই ভাড়া না পেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
রাঙামাটি ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস গাইড এর স্বত্ত্বাধিকারী হিমু বাপ্পী জানান, সচরাচর পর্যটক মৌসুমগুলোতে আমাদের বিভিন্ন রিসোর্ট ও কটেজের জন্য ভালোই বুকিং থাকে। কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি। আমাদের বেশিরভাগ কটেজ এখনো বুকিং হয়নি। এদিকে ছুটি শেষ হয়ে গেলে আর বুকিং পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ ট্যুরিস্ট এসেছেন আমরা আশা করেছিলাম এর থেকে আরেকটু বেশি ট্যুরিস্ট আসবে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়া জনিত কারণেও আশানুরুপ পর্যটক হয়নি। ঈদের আগে আমাদের ৫০ শতাংশ বুকিং ছিল এবং বর্তমানে আমাদের ৬০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। আজ সরকারি ছুটি শেষ হয়ে গেলেও যেহেতু স্কুল কলেজগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে তাই আশা করছি আগামী কয়েকদিনে পর্যটক উপস্থিতি আরো বাড়বে।
বিএনএ/এমএফ/এইচ এইচ