বিএনএ, ঢাকা: গুলশানে হোলি আর্টিজান রেঁস্তোরায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার সাত বছর পূর্ণ হলো আজ। অধঃস্তন আদালতের রায়ে ৭ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ আসে। বিচারিক আদালতের রায়ের পর দীর্ঘ দিন উচ্চ আদালতে আটকে থাকা এ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের শুনানি শিগগিরই নিষ্পত্তি হতে পারে এমনটি জানিয়েছেন হাইকোর্টে এ মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, একজন বিচারক হজে গিয়েছেন, তিনি ফিরে আসলেই দুই বা তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হবে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ আইন কর্মকর্তার প্রত্যাশা, ৭ জঙ্গির ফাঁসির রায় বহাল থাকবে উচ্চ আদালতে। এই রায়ের মাধ্যমে বিশ্ব দেখবে বাংলাদেশ এমন ঘটনায় কোনো ছাড় দেয় না।
২০১৬ সালের ৩০ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্তোরাঁয় নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করে সশস্ত্র জঙ্গিরা। এ ছাড়া জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে দুই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান। একপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ৫ জঙ্গি নিহত হয়। এ ছাড়া ওই ঘটনার সময় রেঁস্তোরার একজন শেফ মারা যান। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে অভিযুক্ত ৭ জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন।
তারা হলেন- রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন, শফিকুল ইসলাম ওরফে খালেদ, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ ও হাসিবুর রহমান সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। এ ছাড়া পৃথক দুটি ধারায় সাতজনকে ১০ ও ৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালত বলেন, এ ঘটনা নৃশংস ও দানবীয়। হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তামিম চৌধুরীকে (জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত) চিহ্নিত করে আদালত বলেন, ‘বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের উদ্দেশ্যে, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এ ঘটনায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে আসমিরা কোনো ধরনের অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না।’ ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট এ মামলায় পেপারবুক প্রস্তত হয়।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারার বিধান অনুযায়ী বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামির দণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন লাগে। এ লক্ষ্যে মামলার রায়ের নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এটিই ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। একই সঙ্গে মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা এবং অধঃস্তন আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথি প্রস্তুত করা হয় যা পেপারবুক হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি কারাগারে থাকা দণ্ডপ্রাপ্তরা আপিল ও জেল আপিলের সুযোগ পান।
বিএনএ/এমএফ/ এইচ এইচ