বিএনএ, সাভার : বাংলাদেশের মতো এমন সম্প্রদায় সম্প্রীতির দেশ বিশ্বের আর কোথাও নেই। ঢাকার ধামরাইয়ের শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের ঐতিহাসিক রথমেলা এর উজ্জ্বল দৃষ্ট্রান্ত। ধামরাইয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে নেই ভেদাভেদ নেই কোন জাতিগত বৈষ্যম্য। হিন্দু মুসলমানের এ মিলনমেলা দেখে আমি সত্যিই অভিভুত ও পুলকিত।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১মিনিটে ঢাকার ধামরাইয়ে সম্রাট শায়েস্তা খান নগরের শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের মাসব্যাপী ঐতিহাসিক রথমেলার উদ্বোধনকালে প্রখান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলার সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ভাবধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও ঢাকার ধামরাইয়ের শ্রী শ্রী যশোমাধবদেবের এ ঐতিহাসিক রথোৎসব নিদিষ্ট গন্ডিতে সীমাবদ্ধা থাকে। ইহা সকল ধর্মের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়ে যায়। হিন্দু-মুসলমান একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ উৎসব পালন করে থাকেন ধামরাইবাসী। এ রথমেলা উপলক্ষ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ীতে যেমন দেশের দূরদূরান্ত থেকে মেহমান বা আত্মীয় স্বজন এসেছেন তেমনি মুসলমানদের বাড়ীতে এসেছেন। এ বহুত পুরনো সংস্কৃতি ও ইতিহাস।
১৯৭১ সালে ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের সু-উচ্চ রথযানটি পাক হানাদার বাহিনী আগুনে ভষ্মিভুত করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রধান অতিথি হিসাবে তৎকালীন পাটমন্ত্রী বাঁশের তৈরি রথযান দিয়ে রথমেলার উদ্বোধন করেন। তিনি ধামরাইবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন আপনারা আবার সেই পুরনো রথযানের আদলে আরেকটি রথযান পাবেন। আজ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছায় সেই ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছেন।
আওয়ামীলীগ মানেই উন্নয়ন। নৌকা মানেই বাংলার মানুষের এক আস্থার প্রতীক। আর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামীলীগ এলেই দেশ ও জাতির উন্নতি হয়। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের পদ্মা ও যমুনা সেতুসহ বড় বড় সেতু ও রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়। মানুষের ঘরে ঘরে শান্তি বিরাজ করে। তাই আপনাদের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধু কন্যা এদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বের শক্তিধর নেতা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করুন ও পাশে থাকুন। আজ তার ই যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের উন্নয়ন ও সন্ত্রাস দমনের রোল মডেল। বহির্বিশ্বে আজ আমরা মাথা উঁচু করে দাাঁড়িয়েছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথমেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস (অবঃ)। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা-২০ ধামরাই আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেরা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী শ্রী বিক্রম কে দোরাইস্বামী, ঢাকা জেলার এডিসি ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পী, ঢাকা পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ সরদার, ধামরাই পৌর মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কবীর মোল্লা, ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাদ্দেছ হোসেন ও ধামরাই থানার অফিসার ইনরচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক।
শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উদ্বোধনের পর শাধব ভক্তরা বিগ্রহ সমুহকে আরোহণ করিয়ে রথযানটি পাটের তৈরি মোটা রশি (কাঁছি) দিয়ে টেনে অনতিদূরে শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের কথিত শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ী নিয়ে আসে। এসময় ঢাক ডোলক ও খোরতালের বাজনা আর নারী পুরুষের কন্ঠে উলুধ্বনী আর আধ্যাত্মিক গানের তালে তালে এক ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। রাস্তার দু’পাশ আর ভবনের ছাদের ওপর থেকে চিনি ও কলা নিক্ষেপে এক মনমুগ্ধকর পরিবেশ ও ধর্মীয় অনুভুতির উদয় হয়। পূর্বের ন্যায় মাধব ও অন্যান্য দেব-দেবী বিগ্রহ রথে চড়িয়ে ৯ জুলাই বিকেল ৬ টায় টেনে আনবে পূর্বের স্থান ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়াস্থ রথখোলায়। উল্টো রথটান হিসাবে পরিচিত। এখান থেকে মূর্তি গুলি চলে যাবে পুরোনো মাধবের নিজ আলয় মন্দিরে।
বিএনএ/ ইমরান খান, ওজি