বিএনএ ডেস্ক: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ৬ বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে যেন নরক নেমে এসেছিল, রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা করে, ৫ শিক্ষার্থী। জিম্মি হন, দেশি-বিদেশিরা।
কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়ার পরও স্পর্শকাতর বিবেচনায় ওই রাতের বদলে পরদিন সকালে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ অবসান হয়, জিম্মিদশার। নিহত হয় ৫ হামলাকারী। ঘটনার পরই গ্রেপ্তার হয়, হামলায় জড়িত অনেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়, বেশ কয়েকজন।
জঙ্গিদের হামলায় সেদিন ঢাকা মহানগর পুলিশের দুই কর্মকর্তা, ১৭ বিদেশি নাগরিক মিলে ২২ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। পরে প্রশাসন অপারেশন থান্ডারবোল্ড নামে অভিযান পরিচালনা করে। রুদ্ধশ্বাস অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গি দশা থেকে মুক্ত হন অনেকে। অভিযানে নিহত হন জঙ্গিরা। বিভীষিকাময় সেই ঘটনার আজ ছয় বছর হতে চলেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর সেটির বিচার প্রক্রিয়া আদালতে চলমান। কিন্তু আজও জানা গেল না এই হামলার নেপথ্যে কারা ছিল এবং কাদের ষড়যন্ত্রে এত বড় হামলা করা হয়েছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সেদিন রাত পৌনে নয়টায় হঠাৎ করে হলি আর্টিজান বেকারিতে গোলাগুলি শুরু হয়। বেকারিটিতে আসা নাগরিকরা দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। সেদিন জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন ২২ জন।
এ হামলা শুরুর পরপরই গুলশান বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ওয়ারলেসে বার্তা চলে যায় এবং পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তাদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন গুলশান থানার ওসি সালাউদ্দিন ও এসি রবিউল ইসলাম। ভেতরে তখন থমথমে অবস্থা। পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় মাটিতে লুকিয়ে পড়েন ওসি সালাউদ্দিন ও এসি রবিউল। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে নিকটস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তারা মারা যান।
সে সময় দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ খবর পাওয়ার ৪৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছেন র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে পৌঁছে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের দেখা মাত্র জঙ্গিরা গুলি ছুটতে শুরু করে। কিন্তু ওই মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো জঙ্গি হলি আর্টিজান বেকারি থেকে বের হতে পারেনি।
অন্যদিকে বেকারিতে আগত ব্যক্তিরা জিম্মি হয়ে পড়েন জঙ্গিদের কাছে। তারা বিভিন্নভাবে প্রশাসনের সহায়তা চান। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিদেশি নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশি সাধারণ জনগণ ছিলেন।
তৎকালীন গুলশান বিভাগের এডিসি ও বর্তমান মতিঝিল বিভাগের ডিসি আব্দুল আহাদ জানান, সেদিন রাতের ঘটনা তিনি কোনোভাবে ভুলতে পারেন না। তার টিমে ওসি সালাউদ্দিন ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন এসি রবিউল। তার চোখের সামনেই তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেদিনকার অভিযানের সময় ওসি সালাউদ্দিনের কথা এখনো মনে পড়ে আব্দুল আহাদের। সেদিন তার পাশেই ছিল ওসি সালাউদ্দিন। তার কথা এখনো কানে বাজে আব্দুল আহাদের। অন্যদের পাশাপাশি জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় আহত হন তিনিও। পুলিশের এই কর্মকর্তা এখনো শরীরে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলার স্প্রিন্টার বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। জঙ্গিদের নারকীয় এই হামলায় ১৬ সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। যার ক্ষত স্বজনরা এখনো বইয়ে বেড়াচ্ছেন।
জানা গেছে, সেদিনের অভিযানের সময় বেকারিটির কর্মচারী ডিশওয়াশার জাকির হোসেন শাওন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় আহত হন। ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। শাওন তার পরিবারের মধ্যে আয়ের অন্যতম একজন সদস্য ছিলেন। কিন্তু তার পরিবারের কেউ খোঁজ খবর রাখেনি।
স্বজনরা জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর জঙ্গিরা নিহত হলেও ষড়যন্ত্র ও নেপথ্যকারীরা এখনো শনাক্ত হয়নি। জানা যায়নি, কাদের পরিকল্পনায় এই হামলা হয়েছিল। যদিও এ হামলার পর বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন। মামলাটি আদালতে চলমান। তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট দিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার পর ছয় মাস বন্ধ ছিল বেকারিটি। এরপর সেখানে আর চালু না করে কয়েক বছর আগে সেটি অন্যত্র চালু করা হয়েছে। হামলার সময় হলি আর্টিজানে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এমন সাত কর্মচারীকে আবারো যুক্ত করা হয়েছে নতুন কর্মস্থলে।
দিনটি স্মরণ করতে আজ সকাল থেকে বেকারির সামনে আসবেন অনেকে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মরত ব্যক্তি ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে গুলশানে এ হামলায় নিহতদের স্মরণে তৈরি বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন অনেকে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ