বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খন্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভান্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে। ১ মার্চ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীনতার নেপথ্যে গণ মাধ্যমের ভূমিকা।
আজ(০১ এপ্রিল২০২২) প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩২
২০ জুলাই, ১৯৭১
…..ডাবলিন থেকে প্রকাশিত ‘আইরিশ টাইমস’ পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয় : ইয়াহিয়া তার বেতার ভাষণে যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বা যে রাজনৈতিক রদবদলের প্রস্তাব করেছে তা জঘন্য। ইয়াহিয়া তার বেয়োনেট-উদ্যত সেনাবাহিনী দিয়ে আটক দেশবাসীর উদ্দেশ্যে যে বক্তৃতা করেছে তাতে তার দেশ গোল্লায় যাবে। বাংলাদেশ থেকে যে সকল নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ সেনাবাহিনীর অত্যাচারে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা কেউই এ প্রস্তাবে দেশে ফিরে আসতে পারে না। ক্ষমতা হস্তান্তরের যে পদ্ধতির কথা ইয়াহিয়া ঘোষণা করেছে তা দুরভীসন্ধিমূলক। দশ লক্ষ বাঙালীকে নির্বিচারে হত্যা করে গোটা বাংলাদেশটাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়ে ইয়াহিয়া বাংলাদেশের কিছু অংশের ওপর তথাকথিত দখল রেখেছে সত্যি, কিন্ত এই দখল রাখতে গিয়ে তাদের যে কি পরিমাণ মাশুল দিতে হচ্ছে তা একমাত্র তারাই জানে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ ইতিমধ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশ সরকারের অধীনে নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে উঠছে। আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যেসব বাঙালী সৈনিক ছিলেন তারাই আজ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইয়াহিয়া সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশের সর্বত্রই এখন গেরিলা যুদ্ধ চলছে- শুধুমাত্র তাই নয়, ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনীতেও গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। ‘আইরিশ টাইমস’ পত্রিকায় আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে সামরিক সমাধানের পথ বেছে নিয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছে। বর্তমানের এই দারুণ সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে শরণার্থীরা দেশে ফিরে যেতে পারে না। ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী ও সরকার যেখানে আজও হত্যা, লুন্ঠন ও নির্যাতন সমানে চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। ভারতে এভাবে লাখ লাখ শরণার্থী ঠেলে দিয়ে ইয়াহিয়া সরকার প্রকৃতপক্ষে ভারতের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে চাইছে। পত্রিকায় বলা হয় : বাংলাদেশ সমস্যার প্রকৃত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকেই যাবে এবং তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
স্টকহোম থেকে প্রকাশিত সুইডিশ দৈনিক DOGENS NYHETER- এর এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে পাকিস্তানকে বাংলাদেশে সামরিক তৎপরতা বন্ধ করে বাংলাদেশের জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলা হয়।
‘DOGENS NYHETER’-পত্রিকার এই সম্পাদকীয় নিবন্ধটিতে ইয়াহিয়ার সামরিক অভিযানের কঠোর সমালোচনা করে বলা হয় : বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতা বর্তমানে চরমে পৌঁছেছে। এখনও বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ শরণার্থী সৈন্যদের তাড়া খেয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
পত্রিকায় বলা হয় : বাংলাদেশে সামরিক বর্বরতা সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে গিয়ে কিছু সময় দাঁড়ালেই ইয়াহিয়ার স্বাভাবিক পরিস্থিতির দাবীর অসারতা সহজেই ধরা পড়ে- বোঝা যায় ইয়াহিয়া সরকারের মিথ্যা প্রচারণার বহর।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – ৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৬৮-৬৯) চলবে।
আরও পড়ুন :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৮
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-২৪
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা