বিএনএ, চট্টগ্রাম: শুল্ক হার বৃদ্ধির জেরে চট্টগ্রাম নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে আমদানি করা ফলের বিক্রি কমে গেছে। বিদেশ থেকে ফল আমদানিও কমে গেছে। চট্টগ্রাম নগরীর ফলমন্ডিসহ পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমে গেছে ক্রেতা। বিক্রেতারা জানান, আমদানি কমলেও মজুদ পর্যাপ্ত। তবে নতুন করে আমদানির জন্য ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হচ্ছে না। এতে রমজানে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে। এ অবস্থায় ফলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা। তবে পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই স্থিতিশীল আছে আমদানি করা খেজুরের দাম। বিক্রেতাদের মতে খেজুরের দাম গত বছরের চেয়ে কম।
গতকাল নগরীর কদমতলী এলাকার ফলমন্ডিতে প্রতি কেজি আপেল বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। প্রতি কেজি আঙুর বিক্রি হয় ২৭০ টাকা। মাল্টা বিক্রি হয় মানভেদে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজার থেকে কেনা ফল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি। মরিয়ম খেজুর প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, আজওয়া খেজুর প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আজওয়া খেজুর প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। মানভেদে কিছু খেজুরের দাম এখনও ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার কাঁচা বাজারের সামনে ফলের দোকানে প্রতি কেজি আপেল মানভেদে বিক্রি হয় ৩৩০ থেকে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত। ভালো মানের আপেল ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আঙুর প্রতি কেজি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ভালো মানের মাল্টা ২৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে খুচরা বাজারে নিম্নমানের অনেক খেজুর বিক্রি হচ্ছে। এসব খেজুর প্রতি কেজির দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ভালো মানের খেজুর পাওযা যাচ্ছে বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। আড়ত এবং কয়েকটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছাড়া নগরীর সব জায়গায় ভালো মানের খেজুর মিলছে না।
আমদানিকারক আবুল কালাম জানান, রমজানের আগ মুহূর্তে ফল বিক্রি বেড়ে যায়। কিন্তু এবার পাইকারদের আড়তে খুচরা বিক্রেতাদের আনাগোনা নেই। একটাই কারণ ফলের দাম বৃদ্ধি। সরকার শুল্ক হার কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। শুল্ক হার কমানো হলে পাইকারি ও খুচরা দুই পর্যায়ে দাম কমবে। তখন ক্রেতা বাড়বে পাশাপাশি আমদানিও বাড়বে।
ফলমন্ডির ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম বলেন, শুল্ক হার বৃদ্ধির পর সব ধরনের ফলের দাম বেড়ে যায়। আমাদের দাম রাখতে হচ্ছে শুল্ক হার যোগ করে। এতে আমাদের ক্রেতা কমে গেছে। দুই মাস আগে আমরা যেসব ফল বন্দরে আমদানি করেছিলাম সেসব ছাড়ের আগে হঠাৎ করে শুল্ক হার বেড়ে যায়। শুল্ক হার বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়তি রাখতে হচ্ছে। আগে আমদানি করা ফলমূল বন্দর থেকে ছাড় করতে হচ্ছে নতুন করে আরোপ করা শুল্ক যোগ করে। প্রতি কার্টনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লসে বিক্রি করতে হচ্ছে ফলমূল।
ফল খালাস বন্ধসহ ব্যবসায়ীদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত আছে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, শুল্ক হার কমানোর ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেয়েছি। তাই বন্দর থেকে খালাস বন্ধ রাখাসহ আমাদের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছি।
আমদানি করা বিদেশি ফলের মধ্যে এ সময় রোজাদারদের পছন্দের খেজুরের দাম এবার অনেকটাই স্থিতিশীল। গত বছরের মতো সিন্ডিকেটের কারসাজি কিংবা দাম বৃদ্ধির অস্থিরতা নেই। চট্টগ্রামের খুচরা ও পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ধরনের খেজুর পাওয়া যাচ্ছে। সৌদি আরবের মাবরুম খেজুর থেকে মরিয়ম, আজওয়া সব ধরনের খেজুর পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি মাবরুম খেজুর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর মাবরুম খেজুর বিক্রি হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। আজওয়া খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়। মিসরের মেডজুল খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। যা গত বছরের চেয়ে অন্তত ৫০০ টাকা কম। সব ধরনের খেজুরের দাম গত বছরের চেয়ে কম। মানভেদে কিছু খেজুর প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে খেজুরের বাজার এখনও জমেনি বলে জানান বিক্রেতারা।
প্রসঙ্গত, সরকার গত ৯ জানুয়ারি আমদানি করা তাজা ফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করে। এতে দেশের বাজারে হঠাৎ করে বেড়ে যায় ফলমূলের দাম। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনসহ ফল খালাস বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দাবির মুখে আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতি, আনারসহ তাজা ফলের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। দাম আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে কমিশন। এ ছাড়া তাজা ফল আমদানিতে অগ্রিম কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক যৌক্তিক করারও সুপারিশ করা হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে এ সংক্রান্ত দেওয়া চিঠিতে শুল্ক হ্রাসের সুপারিশ করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে আমদানি বাড়বে। ব্যবসায়ীদের স্থগিত আন্দোলন কর্মসূচিও প্রত্যাহার করা হবে।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ