28 C
আবহাওয়া
১:৫৪ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মৃত্যু

মৃত্যু


।। আব্দুল্লাহ আল মাহবুব শাফি।।

বিএনএ, নোবিপ্রবি: ভোর থেকে সন্ধ্যা বেলায় নিত্যদিন প্রিয় বিদ্যাপীঠে ঘড়ির কাঁটার ন্যায় চলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশনসহ নানা কর্মযজ্ঞ। এর মধ্যেই সাংস্কৃতিক থেকে রাজনৈতিক সব সংগঠনগুলো ব্যস্ত থাকে জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান বিতরণ এবং আহরণসহ ব্যতিক্রমী মিটিং-মিছিল নিয়ে। আবার নানা আয়োজনে ক্যাম্পাসের রাস্তায়, বিভিন্ন দেয়ালে আলপনার ছাপ দিতে হয় চিত্রশিল্পীদের। এদের সবাই শিক্ষার্থী।

দেশের নানা প্রান্তরে গড়ে ওঠা সুপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিত্যনৈমিত্তিক কর্মসূচি এটি। ক্যাম্পাস নামক শব্দটি এমন রোমাঞ্চকর স্মৃতির ঝুড়ি নিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মার সঙ্গে মিশে আছে। দক্ষিণের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ উপকূলের অক্সফোর্ড খ্যাত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়।

উন্মুক্ত ক্যানভাসে আঁকা ছবিগুলোর প্রত্যেকটিই যেন জীবন্ত। সেগুলো যেমন দর্শকদের অভিভূত করে, দেওয়ালগুলোও যেন তেমনি ছবির ভাষায় মানুষের সঙ্গে অনবরত ভাবের আদান-প্রদান করে।

রঙ তুলির শক্তি খুবই তীব্র

নিজের ক্যাম্পাসকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার প্রয়াসে কয়েকজন সতীর্থ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শরীফ মেজবা শুরু করলেন ইট-পাথরের দেওয়ালকে কথা শেখাতে। শুরু হলো দেওয়ালে ছবি আঁকা। তাঁর হাত ধরেই শুরু হলো সংগঠন চিত্রকৃৎ এর পথচলা।

সতীর্থ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শরীফ মেজবা শুরু করলেন ইট-পাথরের দেওয়ালকে কথা শেখাতে

চিত্রকৃৎ এর সভাপতি শরীফ মেজবা বলেন, “চিত্রকৃৎ এর পথচলা ২০২০ সালের দিকে। আমি সহ পাঁচজন কনভেনের ফরম পূরণ করি। ২০২২ সালে আমাদের প্রথম গভর্নিং বডি ফর্ম করি যা এখনো চলছে। চিত্রকৃৎ এর মূল উদ্দেশ্য ক্যাম্পাসের আর্টিস্টদের একটা প্ল্যাটফর্মে আনা, ক্যাম্পাসকে রঙিন করে তোলা। একজন শিল্পীর মনের ভিতর যে স্বত্তা রয়েছে সেটিকে ক্যাম্পাসের দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা।”

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আকাশ বনিক বলেন, “মূলত দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমণ কালে ওখানকার গ্রাফিতি দেখে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এর অভাববোধ থাকেই ক্যাম্পাস রাঙানোর ইচ্ছে জন্মায়। আমি অনেক গুলো মানুষ সাথে পেয়েছি, যাদের সৃজনশীলতা আমায় মুগ্ধ করে। আমার ক্যাম্পাস নতুন রূপে সাজছে। মানুষ দেখছে, ভাবতে শিখছে, মানুষদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটছে, এটাই আমার পাওয়া। নবীনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, প্রতিটা মানুষ আলাদা আলাদা গুণের অধিকারী হয়। সবাই নিজের মধ্যে থাকা পটেনশিয়াল এবং ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যা অচিরেই দূর হবে। রঙ তুলির শক্তি খুবই তীব্র এবং এটি খুব মানুষের হদয়ে জায়গা করে নেয়। চিত্রকৃতের হাত ধরেই সেই অগ্রযাত্রাটি হোক।”

দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি অংকন করেছে চিত্রকৃৎ

চিত্রকৃৎ এর হেড অব পাবলিক রিলেশন ঐশ্বরিয়া চৌধুরী ইশান বলেন, “ছোট থেকেই রঙ, আঁকাআঁকি ভালো লাগে, কখনো শেখা হয়নি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, টুকটাক যা পারতাম তাতেই আগ্রহ জন্মেছিল। আর ক্যাম্পাসে আসার পর ক্যাম্পাস এর সাদা দেওয়াল গুলা দেখে ভাবতাম তারা রঙিন যদি হতো কতই না সুন্দর লাগতো! তো সেই থেকেই আসলে শুরু। ২০১৯ এ প্রথম বর্ষে ছিলাম, তখন ইচ্ছে ছিল ডিপার্টমেন্ট রাঙাব।

তিনি বলেন, আমরা যারা আঁকি, তারা আসলে মনের শান্তির জন্য আঁকি। একটা দেয়াল খালি দেখলে কেমন জানি লাগে, শূণ্যতা যেন ঘিরে থাকে, যখনি রঙের একটা আঁচড় পড়ে প্রাণ ফিরে আসে দেয়াল গুলোতে, এটা দেখতেও শান্তি লাগে। যখন দেখি নিজের ক্যাম্পাসে নিজের আঁকা কিছু একটা আছে যা ক্যাম্পাস এর সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে, মানুষ আসছে। যখন দেখি কিছুটা হলেও ক্যাম্পাসে তুলির আঁচড় দিয়ে রাঙাতে পেরেছি, আনন্দ হয় খুব। আমাদের চিত্রকৃৎ হল এমন একটা জায়গা যেটা শুরু হয়েছিল কিছু রঙ পাগল, শিল্পীদের একত্র করার একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে৷ আর বলবো আমাদের ক্যাম্পাসে শিল্পীদের প্ল্যাটফর্ম দেয়ার জন্য চিত্রকৃৎ তো আছেই। তারা আসুক আমাদের সাথে, একসাথে আমরা কাজ করবো। আনন্দ ছড়াবো একসাথে ১০১ একরে।”

নীল দিঘী

চিত্রকৃৎ এ নতুন যোগ দেওয়া সদস্য নুসরাত জাহান হ্যাপি বলেন, “ক্যাম্পাসে আসার পর দেয়ালে চিত্রকৃৎ এর মুগ্ধকর চিত্রগুলো দেখে তখন থেকেই ইচ্ছে জাগে চিত্রকৃৎ এর সদস্য হওয়ার। আঁকাআঁকির প্রতি একটা মন থেকে ভালোবাসা আছে, ছোট থেকেই আঁকাআঁকি আমার নেশা। এখন আমি চিত্রকৃৎ এর নতুন সদস্য। আমিও ক্যাম্পাস রঙিনের কাজে যুক্ত হবো, এইজন্য অনেক ভালো লাগছে।”

চিত্রকৃৎ এর দৃষ্টিনন্দন এসব শিল্পকর্ম প্রশংসিত হয়েছে ক্যাম্পাসের বাইরেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এসব চিত্রকর্মের ছবি পৌঁছে গেছে দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিদেশেও। প্রতিটি ছবি আঁকার পরেই নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা তো বটেই, ক্যাম্পাসে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরাও সেগুলোর সঙ্গে নিজেদেরকে ক্যামেরাবন্দি করেন। শিল্পীর কাছে বিষয়টি ভালোলাগার, আনন্দের।

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে একাডেমিক ১, নীল দিঘী, শান্তি নিকেতন, লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ের কোরিডোর, টিচার্স কোয়ার্টার, গ্যারেজসহ বিভিন্ন জায়গায় দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি অংকন করেছে চিত্রকৃৎ। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আঁকাআঁকির সেগমেন্টে কাজ করে চিত্রকৃৎ।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ