বিএনএ,বিশ্ব ডেস্ক:মায়ানমারের ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিসহ দলটির অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার(১ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এক বিবৃতিতে বলেন, মায়ানমারের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের চেষ্টা অথবা গণতান্ত্রিক উত্তরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরির যে কোনো চেষ্টার বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব পদক্ষেপ বাতিল করা না হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সব সরকারি কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের নেতাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতি বার্মার জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। সামরিক বাহিনীর তাদের পদক্ষেপ থেকে এখনি সরে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, মায়ানামারের ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া বেশ উদ্বিগ্ন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিজ পেইনি। সেইসঙ্গে ভোটের ফলাফলকে সম্মান জানিয়ে সুচিকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সরকার গঠনের প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থন রয়েছে।
মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান এবং অং সান সুচিসহ বেসামরিক নেতাদের আটকের ঘটনায় জাপানে থাকা মায়ানমারের নাগরিকেরা রাজধানী টোকিওতে বিক্ষোভ করছেন।
মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সোমবার এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বলে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মায়ানমারে যা ঘটছে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে তা লক্ষ্য করছে তারা। আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। ভারত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের পর মায়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় বেশ জোরালোভাবেই নিন্দা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন,মায়ানমারের জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে।সব আইনি, কার্যনির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের ঘোষণার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন,এইসব ঘটনা গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রতি মারাত্মক আঘাত।
জাতিসংঘের মুখপাত্র মুখপাত্র স্টিভেন দুজারিক বলেন, সব নেতাদের মায়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বৃহত্তম স্বার্থে কাজ করতে হবে। অর্থপূর্ণ সংলাপ,সহিংসতা থেকে বিরত এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে পুরোপুরি সম্মান করতে হবে বলেছেন তিনি।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন সিফটন বলেছেন, প্রথম বিষয়টি হচ্ছে যে মায়ানমারের সামরিক জান্তা যারা কয়েক দশক ধরে দেশটিকে শাসন করেছে তারা কখনোই আসলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। তারা কখনোই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন মেনে নেয়নি, আর তাই সোমবারের ঘটনা আসলে এতদিন ধরে চলা অবস্থারই প্রকাশ মাত্র।
উল্লেখ্য, গত বছর ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বড় জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন।দেশটিতে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় নির্বাচন ছিল এটি।
নির্বাচনের পর থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক সরকারের উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নতুন করে নির্বাচনের দাবি করে।দেশটির নির্বাচন কমিশন অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করলেও উত্তেজনা বাড়তে থাকায় দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার দেশটিতে আবারও সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
এরপর স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে ক্ষমতা দখল করে সেনা বাহিনী।জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।গ্রেফতার করা হয়েছে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু’চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
দীর্ঘ ৫০ বছরের সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে গণতন্ত্রের পথে ফেরে মায়ানমার। কিন্তু দেশটির পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ সেনাবাহিনীর হাতে থেকে যায়।এর আগ পর্যন্ত অর্ধশতক মায়নমার সেনাবাহিনীর শাসনেই ছিল। সে সময় দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয় সু চিকে।
গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান সু চি। এরপর তার দল এনএলডি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে ২০১০ সালে মুক্তি পান সু চি।২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়ী হয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয় সু চির দল।২০১৫ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগোরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে এনএলডি।
বিএনএনিউজ/আরকেসি