বিএনএ,চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় গত এক বছরে চারটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এরমধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে ৩ জন। কর্ণফুলীর প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় গড়ে ওঠেছে সন্ত্রাসী চক্র কিশোর গ্যাং। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে স্থানীয় সাধারণ মানুষ অতিষ্ট।
উঠতি বয়সের এসব সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারায় তিন জন। কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের জাফর ড্রাইভারের বাড়ির মৃত শরীফ আলীর ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমের (৪৬) কাছে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাদাবি করে আসছিল ১ নং ওয়ার্ডের নাছির উদ্দিন ড্রাইভারের ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার মো. রুবেল (২৩)। জাহাঙ্গীর চাঁদা না দিলে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন রুবেল।
গত ১০ ডিসেম্বর রাতে চরপাথরঘাটা এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা ভাড়াকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে রুবেলের বড়ভাই চালক মো. ইয়াছিন (২৫) এর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে অটোরিকশা চালক মো. ইয়াছিন লোকজন নিয়ে আসার জন্য তার ভাই মো. রুবেল (২৩) কে ফোন করে। কথিত রুবেল ও তার সহযোগী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে ছুরিকাঘাত করে।
১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এঘটনায় তার স্ত্রী মোছাম্মত নুরতাজ বেগম বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করেন। ২১ ডিসেম্বর র্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মামলার আসামী রুবেল ও ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রেপ্তারের পর ঘাতক রুবেলের রাজ্যজয়ের হাসিতে হতবিহবল কর্ণফুলীর জনগণ। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট এ ঘাতক গড়ফাদারদের আশির্বাদে আইনের ফাঁক-ফোকরে বেরিয়ে আসবে। আবারও কারও জীবন কেড়ে নিয়ে ওট্টহাসিতে মেতে উঠবেন।
১৯ মে রাতে কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা গ্রামের ৩ নং ওয়ার্ডে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সাগরের ছুরিকাঘাতে মো. মুরাদ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক খুন হয়। নিহত মুরাদ চরলক্ষ্যা গ্রামের ৪ নং ওয়ার্ডের বশর হাজীর বাড়ির মৃত আব্দুর রহিম মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় প্রাইভেটকার চালক।
কথিত হত্যাকারী সাইফুল ইসলাম সাগর ওই এলাকার হাফেজ আহমদের ছেলে। কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক, চরলক্ষ্যা ১নং বোর্ড বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি। হত্যাকাণ্ডের পর তাকে দল বহিস্কার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত মুরাদের মা রাবেয়া বশরী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে আসামী সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২৫ সেপ্টেম্বর রাতে চরলক্ষ্যা গ্রামের ৩ ওয়ার্ডের চার রাস্তার মোড়স্থ বড় মাঝির খামার এলাকায় ব্যাটারি রিকশা চালক শাকিল(১৭)কে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার মোবাইল ফোন ও ব্যাটারি চালিত অটো-রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতকরা।
২৫ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা থানার বন্দর এলাকা থেকে শাকিল হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই ঘাতককে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন-কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. তারেকুল ইসলামের ছেলে মো. মোহসিন (১৯) ও নগরীর সদরঘাট থানার ইটালী কলোনির মো. সোলেমানের ছেলে মো. ইরফান (২৩)। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ও ব্যাটারি রিকসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
১৩ জুলাই বিকালে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আছিয়া বেগমের অফিস থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাজমিস্ত্রী মো. নুরুল আলম (৪৫) এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত নুরুল আলম কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ১ নং ওয়াডের ইঞ্জিনিয়ার আবুল মাসুমের বাড়ির মৃত শরফত আলীর ছেলে। পাওনা টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় নিহত নুরুল আলমের ছেলে নজরুল ইসলাম কর্ণফুলী থানায় চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওইদিন মহিলা মেম্বার, কোরবান আলী, মো.পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পালিয়ে যায় আরেক আসামি নাছির উদ্দিন।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, কর্ণফুলীর পাড়ায়-মহল্লায় গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং নামদারী সন্ত্রাসী চক্র। তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে। এ সন্ত্রাসী চক্রকে প্রতিরোধ করতে হবে। অন্যথা নতুন বছরে তারা আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে। এতে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতি হবে।
এনএএম