26 C
আবহাওয়া
৯:০২ পূর্বাহ্ণ - মে ৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৭ (নওগাঁ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৭ (নওগাঁ-২)

নওগাঁ-২

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নওগাঁ-২ আসনের হালচাল।

নওগাঁ-২ আসন 

নওগাঁ-২ সংসদীয় আসনটি নওগাঁ জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে সীমান্তবর্তী বরেন্দ্রভূমি অধ্যুষিত পত্নীতলা এবং ধামইরহাট উপজেলা  নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৪৭ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ-২ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৩ শত ১৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুর রউফ মান্নান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৪০ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সামশুজ্জোহা খান বিজয়ী হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপির সামশুজ্জোহা খান বিজয়ী হয়। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২২ হাজার ৭ শত ৫৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী  মোখলেছুর রহমান।  তিনি পান ৪ হাজার ৪ শত ৩৩ ভোট।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে।

এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম  সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সামশুজ্জোহা খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৩শত ৫৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির সামশুজ্জোহা খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৫ শত ৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ১ শত ৯৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শামশুজ্জোহা খান  নির্বাচিত

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩১ হাজার ১ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫ হাজার ৮ শত ৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির শামশুজ্জোহা খান  বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১২ হাজার ৮ শত ২৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৩ শত ৭৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬২ হাজার ২ শত ৮৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৭ শত ৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭ শত ৯৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামশুজ্জোহা খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ৪ শত ৫ ভোট।২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  শহীদুজ্জামান সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার নির্বাচিত হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২২ হাজার ৯১ জন। ভোট প্রদান করেন ২লাখ ৮১ হাজার ৬ শত ২৩ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শামসুজ্জোহা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির বদিউজ্জামান, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দেলোয়ার হোসেন, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির এস জে এ আর ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার নির্বাচিত হন। নৌকা প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৭২ হাজার ১ শত ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামশুজ্জোহা খান। ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ শত ৬৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-২ (পত্নীতলা এবং ধামইরহাট) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। মনোনয়ন চাইবেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এইচ এম আখতারুল আলম এবং নওগাঁ জেলা কৃষক লীগের সাবেক উপদেষ্টা বি এম আবদুর রশিদ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খান, নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী বদিউজ্জামান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জেলা আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন।

এছাড় দলীয় মনোনয়ন চাইবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দেলোয়ার হোসেন, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির এস জে এ আর ফারুক।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নওগাঁ -২  আসনে পঞ্চম, নবম, দশম এবং একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ, ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম  সংসদে বিএনপি  প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম এবং ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নওগাঁ -২  আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭০.১৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৭৬%, বিএনপি ৩৪.১২%, জামায়াতে ইসলামী  ২৩.৭৪ %, জাতীয় পার্টি ০.৬৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৫৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.৪১%, বিএনপি ৩৯.১৩%, জামায়াতে ইসলামী ১৪.৮৭%, জাতীয় পাটি ১০.৭৩% স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.৮৬% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.০৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৪৩%, ৪ দলীয় জোট ৫৪.৮২%, জাতীয় পার্টি ১.৫৬%,স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.১৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৪.৮১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৭৯%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.০৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.১২% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়,  নওগাঁ-২ (পত্নীতলা এবং ধামইরহাট) উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বলা যায়। তবে জামায়াতে ইসলামীর নিরব ভোটাররা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে সিল মারবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৪৭, নম্বর নওগাঁ-২ আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

 

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ