32 C
আবহাওয়া
১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ - মে ২৯, ২০২৩
Bnanews24.com
Home » আশুলিয়ার বিশমাইল-জিরাবো সড়কের বেহাল দশা

আশুলিয়ার বিশমাইল-জিরাবো সড়কের বেহাল দশা

আশুলিয়ার বিশমাইল-জিরাবো সড়কের বেহাল দশা

।।ইমরান খান।।

শ্রমজীবি ও সাধারন মানুষের দুর্ভোগের নাম আশুলিয়া সাভারের বিশ মাইল জিরাবো সড়ক। পুরো সড়ক জুড়েই বড় বড় খানা খন্দে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সামান্য বৃষ্টি নামলেই তলিয়ে যায় সড়ক। মাঝে মধ্যেই এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে রিকশা ভ্যান, অটোরিকশা সহ আটকে পড়ছে প্রাইভেটকার ও মালবাহী কাভার্ডভ্যান। শিল্প এলাকা হওয়ায় কয়েক লক্ষ লোক প্রতিদিন দূর্ভোগকে সঙ্গী করে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন নিরব ভূমিকায়।

সরেজমিনে বিশ মাইল-জিরাবো সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কটির আমতলা এলাকায় থেকেই বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে থাকায় নিজের অজান্তেই অনেকে সেখানে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জামা কাপড়সহ সাথে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র। এরপর থেকে পুরো সড়ক জুড়েই একই অবস্থায়। সড়কটির কাঠগড়া, কাঠগড়া বাজার, পুকুরপাড়, জিরাবোসহ অন্তত ১৫-২০ জায়গায় একই রকম বেহাল দশার কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। কোথাও কোথাও সড়কের মাঝখানে বিপদজনক স্থানে বাঁশ দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হচ্ছেনা। এছাড়া ব্যাস্ততম সড়কটির ভাঙ্গা যায়গা গিয়ে একপাশ থেকে গাড়ি আসলে অন্যপাশের গাড়িকে দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হয়। এসময় সৃষ্ট যানজট খানা খন্দে জমে থাকা জলজটের কারনে কর্মজীবি লোকজন সময়মতো অফিসে পৌঁছতে পারেননা।

অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা-আবর্জনায় সড়কটি একাকার হয়ে যায়। এসব পানি আর ময়লা মারিয়ে প্রতিনিয়ত পেটের তাগিদে কারখানায় আসা যাওয়া করছে তৈরী পোশাক শ্রমিকরা।

কুটুরিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা এডভোকেট শফিক দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, সড়কটির দুই পাশে বড় বড় কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এটি নিচু হয়ে গেছে। ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট হয়ে খানা খন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি নিয়ে জনগন চলাচল করলেও জনপ্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দুর্ভোগ লাঘবে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

আশুলিয়া বড় রাঙ্গামাটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কিনতে কাঠগড়া বাজারে রিক্সায় করে যাওয়ার সময় খানা খন্দে রিক্সা উল্টে পড়ে যায়। এতে কিছুটা আঘাত পেয়ে বাজার না করেই বাড়ি ফিরে আসে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে জানান তিনি।

আজমত গ্রুপেন সুইং অপারেটর নুর আলম বলেন, কাঠগড়া বাজারের সামনে সড়কে গর্তের কারনে একটি অটোরিকসা উল্টে গেছে। গাড়িটিতে একটি শিশু বাচ্চা ও মহিলাসহ অন্য যাত্রীরা ছিলো। দূর্ঘটনায় একটা মহিলার পা ভেঙ্গে যাওয়ায় অন্যরা তাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার সাথে থাকা শিশু বাচ্চাটিও পানিতে পড়ে যায় এবং কাঁদা দিয়ে সারা শরীর মেখে যায়। তাকেও উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দেই।

এভাবে প্রতিদিনই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অটোরিকসা উল্টে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড়ছেন। এছাড়া আমতলা এলাকার বড় গর্তের মধ্যে মাঝে মধ্যেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ বড় গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে। যে কারনে এই সড়কটি সবসময় যানজট লেগেই থাকে। আমরাও অনেক কষ্ট করে অফিসে যাতায়াত করি। ভাঙ্গা সড়কের কারনে অনেক সময় অটো না পাওয়ায় কাঁদা পানিতে হেটে আসেতে গিয়ে লেট হয়ে যায়।

আমতলা মার্কেট মুদি দোকান লাল চাঁন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় দূর্ভোগ নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। গাড়িগুলো সড়কে আটকে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের বেহাল দশার কারনে লোকজনও দোকানে আসতে না পারায় ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। সরকার যদি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে রাস্তাটি ঠিক করে দেয় তাহলে আমাদের অনেক উপকার হবে।

পোশাক শ্রমিক জিয়াউর রহমান বলেন, আগে ১০ মিনিট সময় নিয়ে বাসা থেকে অফিসে আসতে পারতাম। এখন রাস্তার কারনে বেশী সময় নিয়েও অফিসে সময়মতো আসতে পারিনা। একই কথা জানালেন অপর শ্রমিক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, দুপুরে খাবার জন্য যে সময় দেয়া হয় তখন অটো না পাওয়ার কারনে কারখানায় পৌঁছতে দেরী হয়ে যায়। এছাড়া অফিস ছুটি হলে পুরুষ-মহিলা সবাই একযোগে বের হয়, তখন কে কার উপর দিয়ে যায় রাস্তায় থাকা গর্তে পড়ে গিয়ে আহত হয় অনেকেই।

আশুলিয়া ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডমেম্বার মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশমাইল-জিরাবো সড়কের বেহাল দশার কারনে প্রতিনিয়ত লোকজন আমাদের গালিগালাজ করে। সড়কটি এলজিইডির তত্বাবধানে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের সামান্য অর্থায়নে এতো বড় রাস্তায় কিছুই করা সম্ভব না। এরপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় কিছু ইট ফেলছি। তার পরেও আর কিছু ইট ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলীর সময় দিয়েছে যে কাজ শুরু হবে তাই ফেলতে পারিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন মাদবর বলেন, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক জুড়েই খানা খন্দের কারনে আমি কয়েকবার রাবিশ ফেললেও তেমন কোন কাজে আসেনি। তবে উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানিয়ে বারবার সড়কটি মেরামতের জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাভার উপজেলা পরিষদের প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামানিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সড়কটিতে বেহাল দশার কারনে জনমতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে সড়কটি মেরামতের জন্য ৯ কোটি টাকার একটি ইস্টিমেট করে জেলা অফিসে ফাইল পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি এবং অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেই খুব দ্রুত সড়কটি মেরামত করা হবে।

বিএনএনিউজ২৪ডটকম   / ওজি

 

 

Total Viewed and Shared : 118 


শিরোনাম বিএনএ