29 C
আবহাওয়া
১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ১৩, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা!

সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা!


বিএনএ,ডেস্ক : শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক। অবাক- বিস্ময়কর হচ্ছে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ‘টেম্পারিং’ করে সনদ নিয়েছেন এমন অভিযোগে ২০২৩ সালে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-এর সদস্য ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব খ.ম. আমীর আলী। এ যেন ‘সর্ষের ভেতরে ভূত’!

YouTube player

বাদীর আইনজীবী কাজী সদরুল হকের পিটিশনের প্রাথমিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রুল জারি এবং আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকসহ ৭জন বিবাদীকে শোকজ করা হয়েছে। আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকসহ অন্য আসামিরা আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিয়েছেন এবং শোকজের জবাব দিতে সময় নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৫১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম নেই আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের। জাতীয় জাদুঘরে রাখা ১৯৮৬ সালে তৈরিকৃত লাল মুক্তিবার্তার ভলিউম ঘষামাজা করে নাম অন্তর্ভুক্তি করার অভিযোগ রয়েছে। তবে অ্যাডভোকেট হামিদের লেখা ‘জিন্দাবাদ থেকে জয় বাংলা’ বইয়ের ৬৩ নম্বর পৃষ্ঠায় আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক উল্লেখ করেছেন, তিনি ডেপুটি চিফ পদে ভারতের ত্রিপুরার গোকুলনগর ক্যাম্পের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।

এ দিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মুদ্রিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’র ৩য় খণ্ডের ৬২০ ও ৬২১ পৃষ্ঠায় গোকুলনগর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবিরের কথা বলা হয়েছে। সেখানে ক্যাম্পের ডেপুটি চিফ পদে আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২১ নম্বর সিরিয়ালে ক্যাম্প চিফ হিসাবে শামসুল হক এমপি ও ওয়াসিউদ্দিনের নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রাখা বালাম বইয়ের কয়েকটি পাতার ফটোকপি মামলার নথিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেখানে আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের নাম রয়েছে। ওই পাতায় সব লেখা সবুজ রঙের। তবে মোজাম্মেলের নামের পাশে কয়েক জায়গায় ঘষামাজা ও কালো রঙের কালিতে লেখা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আ.ক.ম. মোজাম্মেল হককে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনাক্ত করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরের জয়দেবপুরে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অন্যতম এই হাসান সরকার। তিনি বলেছেন, আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এটি নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। সংসদে এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। সেখানে মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হিসাবে আমার নাম উল্লেখ করেছেন। আমি দ্বিধাহীন ভাষায় বলছি, আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক কোথাও যুদ্ধ করেননি এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন ।

এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক বলেছেন, সাবেক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে ও জামুকায় পৃথক অভিযোগ জমা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন ডকুমেন্টস উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া অন্য যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছে, তা চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

মামলার বাদী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল সদস্য খ.ম. আমীর আলী বলেছেন, ১৯৭১ সালের আগে মোজাম্মেল হক বিএ এবং এমএ পাশ করেন ১৯৯৪ সালে। কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের নথিতে টেম্পারিং করে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে লিখেছেন এমএ এলএলবি যা শুধু অসম্ভবই নয়, কল্পনাতীত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এসব করেছেন।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিক্রি করে আ.ক.ম. মোজাম্মেলক হক হাজার কোটি টাকা ইনকাম করেছেন-এমন দাবি করে  খ.ম. আমীর আলী বলেন, মোজাম্মেল হক  সারা দেশে কমপক্ষে ২৫ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার চিহ্নিত করতে পেরেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। বাকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনাক্তে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রসঙ্গত, টানা তিন মেয়াদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক। ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। আ.ক.ম. মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাও রয়েছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের মতো তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ