37 C
আবহাওয়া
৫:২২ অপরাহ্ণ - মে ৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৭৪ (লক্ষ্মীপুর-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৭৪ (লক্ষ্মীপুর-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে লক্ষ্মীপুর–১ আসনের হালচাল।

লক্ষ্মীপুর-১ আসন

লক্ষ্মীপুর-১ সংসদীয় আসনটি রামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৭৪ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জিয়াউল হক জিয়া বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬২ হাজার ২ শত ৮১ জন। ভোট প্রদান করেন ৬০ হাজার ৯ শত ৬৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির জিয়াউল হক জিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৭ শত ২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর লুৎফর রহমান । দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১১ হাজার ২ শত ৪৮ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নাজিম উদ্দীন আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির নাজিম উদ্দীন আহমেদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জিয়াউল হক জিয়া বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ৪ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৫ হাজার ৬৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির জিয়াউল হক জিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৫ শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সফিকুল ইসলাম । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৭ হাজার ২ শত ৪৪ ভোট।

 

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জিয়াউল হক জিয়া বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫ শত ৮১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪ হাজার ৬ শত ৬৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির জিয়াউল হক জিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৯ শত ৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মো: শাহজাহান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৪ শত ৩৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নাজিম উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪ শত ২০ জন। নির্বাচনে বিএনপির নাজিম উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ২ শত ৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মো: শাহজাহান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৯ শত ৪৬ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়াল বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়াল বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৬ শত ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম। আনারস প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৮ শত ৫৯ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন খান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৯ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩ শত ৮৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন খান, ধানের শীষ প্রতীকে এল.ডি.পি র মোঃ শাহাদাৎ হোসেন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রফিকুল ইসলাম, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোশারফ হোসেন, কাঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আলমগীর হোসাইন, টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের সিরাজ মিয়া এবং হারিকেন প্রতীকে মুসলীম লীগের রেজাউল করিম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এল ডি পি র মোঃ শাহাদাৎ হোসেন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩ হাজার ৮ শত ৯২ ভোট।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদে বিএনপি, দশম সংসদে তরিকত ফেডারেশন ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর লক্ষ্মীপুর–১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর–১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৭.৫৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১০.৫১%, বিএনপি ৪০.৫৬%, জাতীয় পাটি ১২.৬৭%, জামায়াত ইসলামী ১৮.৪৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৭.৮১% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৯.৪৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.৫০%, বিএনপি ৪৩.৯২% জাতীয় পাটি ১৪.৩৬%, জামায়াত ইসলামী ১৩.৫৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬৩% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.৪২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৯৯%, ৪ দলীয় জোট ৬৫.৯২%, জাতীয় পাটি ২.৪৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৪৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪১.১৮%, ৪ দলীয় জোট ৫৫.৬৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.১৫% ভোট পায়।

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) : আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ার খাঁন মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন খাঁন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন লক্ষীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক এম এ মোমিন পাটোয়ারী, রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিক মাহমুদ পিন্টু, সাবেক কর কমিশনার সুলতান মাহমুদ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন।এই আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের এলডিপি থেকে দলের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন তিনি। এবারও তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা চায় এই আসনে দলীয় প্রার্থী। সেক্ষেত্রে বিএনপি থেকে থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইমাম হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ইয়াছিন আলী।

এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির এম. এ আওয়াল। তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন থেকে। ১৯১৮ সালে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হলে তিনি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাতীয় পার্টি থেকে লক্ষীপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, সৌদি প্রবাসী নেতা শাহাদাত হোসেন বাবুল দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) এর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ডা. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মামুনুর রশিদও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, লক্ষীপুর -১ (রামগঞ্জ) আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসাবে পরিচিত। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ থেকে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা বিএনপি এই আসনে রাজত্ব করেন। সাংগঠনিক দিক থেকে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।

সেই তুলনায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক দিক থেকে অনেকটা দুর্বল ও নড়েবড়ে। তা ছাড়া দলে রয়েছে কোন্দল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কোন্দল তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। যা নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৭৪ তম সংসদীয় আসন (লক্ষ্মীপুর-১) আসনটিতে বিএনপি বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ