28 C
আবহাওয়া
১:২৪ অপরাহ্ণ - মে ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ঈদে বাড়িতে এসে যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই আসামী গ্রেপ্তার

ঈদে বাড়িতে এসে যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই আসামী গ্রেপ্তার

ঈদে বাড়িতে এসে যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই আসামী গ্রেপ্তার

বিএনএ, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ঈদে বাড়িতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই আসামী।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ঈশ্বরগঞ্জের বাগুতা গ্রামের মৃত আব্দুল জাব্বারের ছেলে মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম (৬৫) ও ফুলপুর উপজেলার পশ্চিম বাখাই মৃত বসির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মাহাবুব আলম মন্ডল (৭০)।

রোববার (২৫ জুন) বিকাল ৫টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মাসুম আহমেদ ভুঁঞা এসব তথ্য জানান।

এর আগে ওই দিন দুপুরে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের বগাপোতা গ্রাম থেকে মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিনে ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকা থেকে মাহাবুব আলম মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম আলবদর সদস্য ছিলেন। তার সঙ্গী ছিলেন আরও ১৫ থেকে ১৬ জন। ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের ২৫ তারিখে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আহমদের (মৃত) নির্দেশে হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমসহ ১৫/১৬ জন জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী বাজারে হামলা চালিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন উপজেলার সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সোহাগী মাদ্রাসার হিসাবরক্ষক কাঠালিয়া গ্রামের মো. নূরুল হক ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এরপর একই দিন বেলা দুইটার দিকে অভিযুক্ত রাজাকাররা একই বাজার থেকে আওয়ামীলীগ সমর্থক হিন্দু ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্রকে অপহরণ করে আঠারবাড়ি পকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে আটক রাখে এবং পাকিস্তান আর্মির সহায়তায় অমানুষিক নির্যাতন করে তাকে হত্যার পর মরদেহ গুম করে। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৭ কার্তিক বিকালে আওয়ামীলীগ নেতা তারা মিয়াকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তাঁর মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, মাহাবুব আলম মন্ডল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে গঠিত স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি অংশগ্রহন করে। তার বিরুদ্ধে মামলার বাদী পরিমল চন্দ্র দাসের পিতা যোগেশ চন্দ্র দাসসহ তার অন্যান্য আত্মীয়সহ মোট নয় ৯ জনকে টেনে-হিঁচড়ে কংস নদীর পাড়ে নিয়ে রাইফেল ও স্টেনগান দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে।

এছাড়াও, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের উপর অমানুষিক নিযার্তন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষের বাড়ি-ঘর পুঁড়িয়ে দেয় এবং বাড়িতে থাকা সম্পদ লুন্ঠন, নারী ধর্ষণ ও হত্যাসহ জঘন্য অপরাধ চালিয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সাধারন মানুষের জমিজমা আত্মসাৎ করে তাদের ওপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৯০ সালে মাহাবুব আলম মন্ডল কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিল। ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিএনপি’র ফুলপুর সদর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিল। ২০১২-১৪ সালে সে ফুলপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর হিসেবে মনোনীত হয় এবং গোপনে নিজের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে।

মাসুম আহমেদ ভুঁঞা বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মাহাবুব আলম মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। একই আইনে ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

মামলার পর থেকে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়  পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি ঈদ করতে বাড়িতে আসেন তারা। এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত দু’জনকে সোমবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিএনএনিউজ/হামিমুর রহমান,বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ