29 C
আবহাওয়া
১২:২১ পূর্বাহ্ণ - মে ২৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » বিপ্লবী সরকারের দিকে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার!

বিপ্লবী সরকারের দিকে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার!


বিএনএ, ঢাকা: যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচারপ্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

YouTube player

শনিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ বিবৃতি  পাঠানো হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এই বিবৃতিতে, সাংবিধানিক সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন বিপ্লবী সরকার গঠনের ইঙ্গিত রয়েছে। বর্তমান সরকার সাংবিধানিকভাবে শপথ গ্রহণ করায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

এই অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবিধানিক সরকারের আইনী জটিলতা থেকে বের হয়ে ইচ্ছামতো ক্ষমতা চর্চা করতে আগ্রহী। সেকারণে প্রধান উপদেষ্টা তার পদত্যাগের বিষয়টি অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অনির্ধারিত বৈঠকে উপস্থাপন করেছেন এবং পরবর্তীতে বেশ ফলাও করে প্রচার করেছেন।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাংবিধানিকভাবে শপথ নিয়েছে। কিন্তু সেই শপথ নিতে গিয়ে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিয়োগ রয়েছে।  গত বছরের  ৮ই আগষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুপ্রিম কোর্টের ১০৬ ধারায় রেফারেন্স নিয়ে সাংবিধানিকভাবে শপথ নেন বলে জানানো হয়।

সম্প্রতি আইএসপিআর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে ৫ই আগস্ট পরবর্তী প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ছিলেন সেনা হেফাজতে ক্যান্টনমেন্টে। কিন্তু ওই সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ কামাল জানিয়েছিল– সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে সূপ্রীম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাংবিধানিকভাবে শপথ নিয়েছে।

১০ মাস পর জানা গেল পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ১০৬ ধারার ওই রেফারেন্সে সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এনায়েতুর রহিম উপস্থিত ছিলেন না। ছিল না তাদের স্বাক্ষরও।

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মহসিন রশিদ একটি রিট পিটিশন করেন। পিটিশনে তিনি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের ১০৬ ধারার রেফারেন্স আদালতে উপস্থাপনের কথা উল্লেখ করেন।

হাইকোর্ট আইনজীবী মহসিন রশিদের এই রিটটি খারিজ করে দেয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এনায়েতুর রহীম ৫ই আগস্টের পরই সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছে এ কথা আইএসপি’র বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে।

দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্রের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, তিনি শুনেছেন যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে তার কাছে এর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।

রাষ্ট্রপতি বলেন, পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমানের কথোপকথন পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’—এ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবিধানের ৫৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।’

কথোপকথনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘৫ই আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই।’

এর এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর পান জানিয়ে বলেন, ‘আমাকে কিছুই বলে গেলেন না!   যা সত্য তাই আপনাকে বললাম। যাই হোক, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন।

কথোপকথনে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘সবকিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি।’

বিষয়টি নিয়ে মতিউর রহমান চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটাই সত্যি। তারপরও কখনো যাতে এ প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি।

তার পাঠানো রেফারেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ মতামত দেন বলে মানবজমিনের রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী বিভাগ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে এবং প্রেসিডেন্টকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি যদি সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়ে থাকে, তাহলে পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে রেফারেন্সের শুনানি কোথায় ও কিভাবে হলো? কে মিথ্যা বলছে, আইন মন্ত্রাণালয়? নাকি আইএসপিআর?

 

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ