24 C
আবহাওয়া
৪:০৪ পূর্বাহ্ণ - মে ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৩ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৩ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১)

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের হালচাল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনটি শিবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৪৩ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৫ শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯ শত ২৯ জন। বিএনপির অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৫ শত ৬০ ভোট।। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নজরুল ইসলাম দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৯ শত ৪৫ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক শাহজাহান মিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপির অধ্যাপক শাহজাহান মিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে।এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া নির্বাচিত
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৩ হাজার ১শত ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়েতে ইসলামির নজরুল ইসলাম। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ১ শত ৪৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শাহজাহান মিয়া বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪ শত ৮৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯ শত ৯৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির শাহজাহান মিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ৭ শত ৪০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুল হক ।নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৮ শত ৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুল হক বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭ শত ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৭ হাজার ৩ শত ৩৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩ শত ৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া। ধানের শিষ তিনি পান ১ লাখ ১৬ হাজার ৩ শত ৭৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা মো. গোলাম রাব্বানী

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা মো. গোলাম রাব্বানী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: ডাক্তার সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল নির্বাচিত হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৫ হাজার ৮ শত ৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭ শত ৩৬ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সামিল উদ্দিন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শাহজাহান মিঞা, টেলিভিশন প্রতীকে এর নুরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনিরুল ইসলাম মনিউর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য ডাক্তার মঈন উদ্দিন আহম্মেদ মন্টুর ছেলে ডাক্তার সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল নির্বাচিত হন। তিনি পান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা। ধানের শীষ তিনি পান ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬ শত ৮২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ শিবগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের সদস্য ডাক্তার সামিল উদ্দিন প্রতিনিধিত্ব করছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক সচিব জিল্লার রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মো. গোলাম রাব্বানী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আলহাজ এনামুল হক ও সাবেক ছাত্রনেতা প্রকৌশলী মাহ্তাব উদ্দিন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও বিএনপি নেতা বেলাল-ই-বাকি ইদ্রিশী।
এ ছাড়া বিএনএফ থেকে নুরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে থেকে মনিরুল ইসলাম, জাসদ থেকে মো আজিজুর রহমান আজিজ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে নেতা মাওলানা কেরামত আলী।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম সংসদে বিএনপি প্রার্থী টানা বিজয়ী হন। নবম, দশম, একাদশ সংসদে টানা বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠূ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্ঠা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৮৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ০.৯১%, বিএনপি ৩৭.৪৮ %, জামায়াতে ইসলামী ৩৫.৯৮%, জাতীয় পার্টি ০.৩৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৫.৩% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.১৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪.৭৩%, বিএনপি ৪৬.৩৯%, জামায়াত ইসলামী ৩৬.৯৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৯৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.৬%, ৪ দলীয় জোট ৩৮.৮৫%, জাতীয় পার্টি ০.৪৯%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৬.০৬% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.২১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে১৪ দলীয় জোট ৪৫.৩৩%, ৪ দলীয় জোট ৩৭.৮৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১৬.৮১% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত। আওয়ামী লীগের অবস্থান তেমন মজবুত বলা যায় না। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। জামায়াতে ইসলামীর প্রচুর ভোট রয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামী কোন প্রার্থী না দিলে লাভবান হবে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠূ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৪৩ নম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ