21 C
আবহাওয়া
১০:৫১ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করুণ দশা

আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করুণ দশা


।। এনামুল হক নাবিদ।।

বিএনএ :  চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। রোগীর চাপ অনুযায়ী চিকিৎসক কম, মাত্র ২২ জন। এর মধ্যে ব্যক্তিগত, প্রশিক্ষণ ও সরকারি বিভিন্ন কাজে অনুপস্থিত থাকেন বেশ কয়েকজন। সংকট রয়েছে যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় ওষুধের। এদিকে উপজেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন প্রায় ৩ লাখ মানুষের। আরও প্রায় ২ লাখেরও বেশি মানুষ এই উপজেলায় কর্মসূত্রে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও কর্ণফুলী উপজেলার মাঝখানে আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি হওয়ায় পাশের এলাকার বৃহৎ অংশ থেকে জনগণ সেবা নিতে আসেন এই হাসপাতালটিতে। সবমিলিয়ে অন্তত ১০ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। ফলে যেখানে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন রোগী থাকার কথা, সেখানে এই হাসপাতালে ৬০-৭০ জন ভর্তি থাকেন। এ ছাড়া বর্তমানে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে ৫০০ জন এবং জরুরি বিভাগে গড়ে ২০০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নেয়। তবে সহায়ক জনশক্তির সংকট ও দ্বিগুণ রোগীর চাপে এই হাসপাতালে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এ ব্যাপারে উদাসীন স্বাস্থ্য বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনোয়ারাসহ চন্দনাইশ, বাঁশখালী, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া থেকে আগত রোগীদের চাপে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। চন্দনাইশ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চন্দনাইশ পৌরসভায় অবস্থিত হওয়ায় পশ্চিম চন্দনাইশের কানাইমাদারী, কেশুয়া, বরকলের অধিকাংশ রোগী আনোয়ারা হাসপাতালে এসে সেবা নেন। একই কারণে পাশর্^বর্তী আরেক উপজেলা বাঁশখালীর উত্তর অংশের বৃহৎ একটি অংশ ও কর্ণফুলীর উল্লেখযোগ্য রোগী এই উপজেলায় সেবা নিতে আসে। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা হাজারো রোগীদের। সরকারি চিকিৎসা নিতে এসে সেবা না পেয়ে সামর্থ্য না থাকার পরও ছুটতে হচ্ছে আশপাশের ক্লিনিকগুলোতে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসাসামগ্রী বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু দ্বিগুণ রোগীর চাপে অনেক সময় সেবা দিতে চিকিৎসাসামগ্রী সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে একবার উপজেলা কর্মরত চিকিৎসক পরিদর্শন করার কথা থাকলেও ডাক্তার সংকটের কারণে পরিদর্শন হচ্ছে না। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরকৃত ১৬২টি পদের মধ্যে ৭৬টি পদ খালি রয়েছে। হাসপাতালটিতে কন্সালট্যান্ট সার্জারি, কন্সালট্যান্ট চক্ষু, কন্সালট্যান্ট অর্থোসার্জারি, অর্থোসার্জারি ইএনটিসহ বিভিন্ন বিভাগের জনবল না থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

এসব সংকটের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করতে একটি আবেদন করেছেন। বিগত বছরে এই হাসপাতালের বেড অকুপেনসি রেট ছিল ১২৫ শতাংশ। বর্তমান ৫০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে বিপুলসংখ্যক সেবাপ্রার্থীদের চাহিদা পূরণ করা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটি প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি ভবনটির ছাদ ও বাইরের দেয়ালগুলো ড্যাম্প হয়ে গেছে। বহু স্থানে ছাদের প্লাস্টার ঝরে পড়ায় লোহার রডগুলো উন্মুক্ত হয়ে আছে। মরিচা পড়ে দুর্বল হয়ে সেগুলো বিপজ্জনকভাবে ঝুলে আছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভবনে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের পানি ও পয়োনিষ্কাশন পাইপগুলো জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় প্রায়ই লিক হয়ে বা বন্ধ হয়ে রোগী ও কর্মচারীদের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে অবর্ণনীয় দুর্দশার কারণ হচ্ছে। হাসপাতালের বৈদ্যুতিক লাইনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে প্রায়শই শর্টসার্কিট হচ্ছে। মূল্যবান যন্ত্রপাতির জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক, ল্যাব কার্যক্রম, সম্প্রসারণ বিভিন্ন ওষুধসহ অন্যান্য মালামাল ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ বাড়াতে হবে। এগুলো সংরক্ষণের জন্য আধুনিক, সুসজ্জিত ও মানসম্মত স্টোরও প্রয়োজন। এসব অবস্থা বিবেচনা করে আনোয়ারা ও পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোর মানুষের স্বাস্থ্য ও সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আবেদন জানানো হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, আনোয়ারা একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা। বেশ কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে আনোয়ারার যোগাযোগব্যবস্থা ভালো। এ কারণে রোগীরা আনোয়ারামুখী হয়ে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবে এখানে সেবার মানের ওপর প্রভাব পড়ছে। এখানে নানা রকম সংকট রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণ ও ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ করতে আবেদন করেছি। এটি একবারে হোক, না হয় ধীরে ধীরে হোক-একটি পরিকল্পিত ১০০ শয্যার হাসপাতাল করতে হবে। তখন জ্বালানি, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ এসব সংকট কেটে যাবে। মূলত ১০০ শয্যা এটি বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত হবে। এসব সংকট কেটে উঠবে বলে আমি আশা করছি।

এদিকে  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রুগ্ন দশা, তীব্র গরমে কাহিল অবস্থা রোগীদের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে ৩০ কেবি জেনারেটর দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর সহকারী একান্ত সচিব রিদওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে এ কথা জানান।

এসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত মেডিকেল অফিসারের সাথে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি পরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে একটি ৩০ কেবি জেনারেটর, পাবলিক টয়লেট, সুপেয় পানি পান নিশ্চিত করতে ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্লান্ট স্থাপনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। একইসঙ্গে আগামী অর্থ বছরে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

 

বিএনএনিউজ/ নাবিদ/ এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ