34 C
আবহাওয়া
১২:৪৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » নুর খানের অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক, হিসাব দিতে হবে ২১ কার্য দিবসের মধ্যে

নুর খানের অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক, হিসাব দিতে হবে ২১ কার্য দিবসের মধ্যে

নুর খানের অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক

বিএনএ, ঢাকা : এপিএস মোহাম্মদ নুর খানের অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সহকারী একান্ত সচিব। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তিনি । মঙ্গলবার (২২ জুন) দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক গণমাধ্যমকে জানান, মোহাম্মদ নুর খানের অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২১ কার্য দিবসের মধ্যে সম্পদের হিসাব চেয়ে তাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালক মো. আকতার হোসেন আজাদ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে/বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন নুর খান। তাই নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের নিজের, নির্ভরশীল ব্যক্তিদের যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়।

নুর খানের রাজধানীর গুলশানের বাসার ঠিকানায় পাঠানো নোটিশে তিনি ও তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, আয়ের উৎসের বিস্তারিত বিবরণ দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের কাছে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, নূর খান  ‘৯০-এর দশকে দৈনিক ঈশানে সম্পাদনা সহকারী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন । কয়েক বছর পর পত্রিকাটির প্রকাশনা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।এসময় তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পিএস হিসাবে যোগ দেন। মোশাররফ হোসেন মন্ত্রী হওয়ার পর পরই এপিএস হিসাবে পদোন্নতি পান তিনি। এতে যেন তিনি  রাতারাতি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে বসেন। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে তার ক্ষমতা আর অবৈধ সম্পদের পরিমাণ।

অভিযোগ আছে, তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রভাব খাটিয়ে বহুল আলোচিত জি কে শামীম ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামসহ একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দিতেন । ফলে খুব অল্প সময়ে বনে যান বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক। তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও প্লট বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে নূর খান হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সুপারিশ কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় ২২ জনের চাকরির ব্যবস্থা করেন তিনি। বিনিময়ে ছোটবড় প্রতিটি পদের জন্য নিয়েছেন ৪-৫ লাখ টাকা। বড় পদের জন্য নিয়েছেন ৯-১০ লাখ টাকা।মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাবলে নিজের ছোট ভাই মামুন খানকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চাকরিও দিয়েছেন তিনি।

তার অবৈধ আয় ও সম্পদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের কাতালগঞ্জে সিপিডিএলের প্রজেক্টে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে নূর খান এবং তার ভাগ্নের নামে। এছাড়াও জিইসি সার্কেলে মেডিকেল সেন্টারের পার্শ্ববর্তী ‘লাজ ফার্মা’ ফার্মেসিসহ শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি দোকানও রয়েছে। নিজ গ্রামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক তিনি। হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা, বড় দীঘিরপাড় ও সীতাকুণ্ডে বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তার নামে। ঢাকার পূর্বাচলে ৫ কাঠার একটি প্লটেরও মালিক তিনি। গ্রামে গুদাম ঘর ছিল নূর খানের। এখন বিশাল জায়গা জুড়ে বাড়ি করছেন তিনি।  তিনি ব্যবহার করেন এক্সট্রেইল ব্র্যান্ডের গাড়ি।

শুধু তাই নয়, এপিএস হিসাবে চট্টগ্রামের হালিশহরে আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে একটি ফ্ল্যাট (৩১৬) ২৫ বছরের কিস্তিতে সুদসহ ৫৮ লাখ টাকা পরিশোধের নিয়মে পেলেও নূর খান ৬ মাসের মধ্যে ৪৬ লাখ টাকা একসাথে পরিশোধের মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন। গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, একমাত্র নূর খান ছাড়া এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পে ফ্ল্যাট বরাদ্দ প্রাপ্ত কেউই পুরো টাকা পরিশোধ করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি।

২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রাণ জাহাঙ্গীর নামে দুবাইয়ের এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর সাথে দুবাই ভ্রমণে যান নুর খান। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুদক ও প্রশাসনের নজর এড়াতে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে নূর খান সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিরসরাই ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আজমের (দুবাইয়ের পরিচিত হুন্ডি ব্যবসায়ী) মাধ্যমে অবৈধভাবে ২৫ কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। বিগত ৫ বছরে এপিএস নূর খান স্বপরিবারে প্রায় ৬ বার সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক ভ্রমণ করেছেন।

২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আলোচিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদার জিকে শামীম। তার কয়েকমাস পর দুদকে নূর খানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করে সংশ্লিষ্টরা। দুদকে দেওয়া ওই অভিযোগে নূর খানকে জিকে শামীমের সহযোগী দাবি করা হয় এবং তার সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে টাকা পাচারের বিষয় সেখানে উল্লেখ করা হয়। এপিএস নূর খানের আয়ের সাথে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলেও দাবি করা হয়েছিল ওই লিখিত অভিযোগে। অভিযোগের কপিটি ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি গ্রহণ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নূর খানের জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক

বিএনএনিউজ২৪/আমিন

Loading


শিরোনাম বিএনএ