অবস্থানগত কারণে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এই জেলায় গড়ে ওঠেছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগে অনেক পর্যটন এলাকা। তাছাড়া বাংলাদেশের তিনটি উচ্চতম স্থান তাজিনডং (বিজয়), মৌদক মৌল (সাকা হাফং) ও কেওক্রাডং এই জেলায় অবস্থিত। পাহাড়, নদী ও ঝর্ণার মিলনে অপরূপ সুন্দর জেলা বান্দরবান। সশরীরে না গেলে লিখে বুঝানো অনে মুশকিল। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করে আপনি অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। বার বার যেতে চাইবেন।
দেশের যে কোন স্থান থেকে সরাসরি বান্দরবানগামি বাসে ওঠে যাবেন। বান্দরবান সদরে গিয়ে পৌঁছাবেন। যদি সরাসরি বাস না পান বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে চট্টগ্রামগামী বাস বা ট্রেনে চট্টগ্রাম শহরে যাবেন। সেখান থেকে বান্দরবানগামী বাসে উঠবেন।বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, সিনেমা প্যালেস, নতুন ব্রিজ থেকে সব সময় বাস পাবেন। বা ককসবাজারগামী বাসে ওঠে যাবেন এবং সাতকানিয়ার বান্দরবান বাস স্টেশনে নেমেন বান্দরবানগামী জিপ বা সিএনজি অটোরিক্সাযোগে জনপ্রতি ৩০/৪০টাকায় যেতে পারবেন। সাবধান- নতুন গাড়ি নতুন চালক নিয়ে যাবার চেষ্ঠা করবেন না। পাহাড়ি উচু নিচু পথ।
পার্বত্যজেলা বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান :
নীল দিগন্ত পর্যটনকেন্দ্র
২০১৭ সালের ২৫ জুলাই বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং থানচি উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় নীল দিগন্ত পর্যটনকেন্দ্রটি চালু হয়। এটি বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০কি.মি. এবং নীলগিরি পর্যটন রিসোর্ট থেকে ৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত। নীল আকাশ, মেঘ ও সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে।
নীলাচল: মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের কাছেই নীলাচল। যা টাইগার হিল নামেও পরিচিত। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন স্পট হলো নীলাচল। এর অবস্থান টিগেরপাড়ায়। যা বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচলের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট। এখান থেকে পাখির চোখে দেখতে পারবেন পুরো বান্দরবান শহরকে। বর্ষা মৌসুমে এখানে পাবেন মেঘের মধ্যদিয়ে হেঁটে যাওয়ার রোমাঞ্চ। এখান থেকে শুধু সোনালী রংয়ের গোধুলিই নয়, উপভোগ করতে পারবেন জোছনা রাতের অনাবিল সৌন্দর্যও।
নীলগিরি: দেশের উচ্চতম স্থান ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর একটি নীলগিরি। প্রায় ৩৫০০ ফুট উঁচু জায়গাটির অবস্থান থানচি থানায়। বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি রোডে অবস্থিত নীলগিরি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে। এর কাছাকাছিই রয়েছে ম্রো আদিবাসীদের গ্রাম। ক্যাম্পফায়ার করার জন্য জায়গাটি খুবই উপযোগী।
নীলগিরির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নীলগিরির একেবারে চূড়ায় তাদের নির্মিত একটি আকর্ষণীয় রিসোর্ট রয়েছে। থাকতে চাইলে কোনো সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে আপনাকে রিজার্ভেশন নিতে হবে। প্রতিটি ৪,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা ভাড়ায় রয়েছে তিনটি চমৎকার কটেজ। চার বেডের তিনটি তাঁবু রয়েছে যার প্রতিটির ভাড়া ২,০০০ টাকা করে। আরও আছে রেস্টুরেন্ট ও হেলিপ্যাডও।
চিম্বুক: চিম্বুক হলো বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট। এই এলাকার রাস্তাঘাট আঁকাবাঁকা ও সর্পিল। জিপে চড়ে এসব রাস্তা পার হওয়া এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। যাওয়ার পথে বিভিন্ন আদিবাসী পল্লী অতিক্রম করবেন। চিম্বুক এলাকায় সরকারি মালিকানাধীন দুটি রেস্ট হাউজ আছে। থাকতে হলে আগে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রিজার্ভেশন নিতে হবে। সহজে খাওয়া-দাওয়া ও নাস্তা করার জন্য এখানে একটি ভালোমানের ক্যান্টিনও রয়েছে। যেহেতু বান্দরবান শহর থেকে চিম্বুকের অবস্থান একটু দূরে তাই এখানে যেতে হলে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে।
মেঘলা: আকর্ষণীয় অবসর বিনোদন কেন্দ্র হলো মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। বান্দরবান পার্বত্য জেলা কাউন্সিলের খুব কাছেই এটি অবস্থিত। বান্দরবান শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কেরাণীহাট সড়কে অবস্থিত মেঘলায় রয়েছে একটি মিনি সাফারি পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড়ের নিচে একটি কৃত্রিম লেক এবং নৌকা ভ্রমণের সুবিধা। পিকনিক করার জন্য চমৎকার জায়গা এটি।
ডিম পাহাড় (Dim Pahar) বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় অবস্থিত সমুদ্র সমতল থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কপথ। পাহাড়টি বান্দরবানের আলীকদম এবং থানচি উপজেলার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। যা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সড়কপথ। বান্দরবানের থানচি থেকে আলীকদম হয়ে এ পথ চলে গেছে আরেক পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এ পাহাড় চূড়ার আকৃতি দেখতে ডিমের মতো হওয়ায় স্থানীয়রা একে ডিম পাহাড় নামেই চেনে।
বান্দরবান সদর থেকে লোকাল বাসে কিংবা চান্দের গাড়িতে করে থানচি বাজার হয়ে যাওয়া যায় ডিম পাহাড়ে।
ছবি ও ভিডিও -নাছির উদ্দিন