38 C
আবহাওয়া
৬:১৩ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » নীরবতা নয়,পুরুষ তুমি কাঁদতে শেখো

নীরবতা নয়,পুরুষ তুমি কাঁদতে শেখো

নীরবতা নয়,পুরুষ তুমি কাঁদতে শেখো

বিএনএ ডেস্ক : কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্বে যা কিছু কল্যাণ  আধাআধি  ভাগ দিয়েছেন নারীকে। একইভাবে নারী ও পুরুষের মধ্যে অকল্যাণও ভাগ হয়।  নারী নির্যাতন নিয়ে সব সময় বিশ্ব সরব থাকে। পুরুষ নির্যাতনের ব্যাপারে  কারও মাথাব্যাথা নেই। পুরুষ নির্যাতন রোধ কল্পে সুধীজনরা নারী ও পুরুষের পারস্পরিক বুঝাপড়াকে সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দিয়েছেন।

এবারের আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নারী ও পুরুষের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি’।

পুরুষদের প্রতি ‘আইনি ও সামাজিক বৈষম্য’ করা হচ্ছে দাবি করে ‘পুরুষ নির্যাতন দমন আইন’ গঠনের দাবি জানিয়েছে পুরুষভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন। শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।

 

সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জার্মান হেল্প ফর ম্যান, জাতীয় পুরুষ সংস্থা, এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন।

মানববন্ধনে ‘বাংলাদেশ জার্মান হেল্প ফর ম্যান’-এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাজহারুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘পুরুষের নীরবে কান্না কেউ শোনে না। পুরুষ নির্যাতন দমন আইন এখন সময়ের দাবি। পুরুষ নির্যাতন আইন না হলে আগামী প্রজন্মের পুরুষরা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হবেন। বিশেষ করে যেসব পুরুষ প্রবাসে আছেন তারা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ।’

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস মূলত ৬টি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে তৈরি। কর্মক্ষেত্রে অবদানের পাশাপাশি সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার, বিবাহ, শিশু যত্ন এবং পরিবেশে পুরুষদের অবদান উদযাপিত হয় এদিন। এছাড়া, পুরুষের সামাজিক, মানসিক, শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতার যত্ন নেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচিত হয় এমনকি, নানা ক্ষেত্রে তাদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়ও তুলে ধরা হয় এদিন।

 

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস লিঙ্গ সমতার কথা বলে। তাছাড়া, একটি উন্নত ও নিরাপদ বিশ্ব তৈরির লক্ষ্যেও পালিত হয় দিনটি। পুরুষ দিবসের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ এবং পুরুষদের সচেতনতা প্রচার করা।

পুরুষ নির্যাতন বন্ধে ‘জাতীয় পুরুষ সংস্থা’ ১০ দফা দাবি পেশ করে। দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়কে সংশোধন করে পুরুষ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় করতে হবে’, ‘মিথ্যা মামলা প্রমাণ হওয়ার পর রাষ্ট্র ভিকটিমকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে’, ‘সকল পুরুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে’ এবং ‘নারী নির্যাতন আইন সংশোধন করে যুগপোযোগী করতে হবে। ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘মানসিক’ নির্যাতনের শিকার বলে একটি বেসরকারি সংস্থার  গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন নামে ওই সংগঠনটি বলছে, সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না৷

তাদের দাবি, সামাজিক লজ্জার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করেন না অভিযোগকারীরা৷ বিবাহিত অনেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে একমত মানবাধিকারকর্মীরাও৷ তারা বলছেন, পুরুষদের নির্যাতিত হওয়ার খবর তাদের কাছে আসে৷ তবে যেই নির্যাতিত হোক তার আইনি সুরক্ষার দাবি জানান তারা৷

বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সানজীদা আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সমাজে পুরুষ একই সঙ্গে কিন্তু নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে তারা নির্যাতিত হলেও হতে পারে৷

তিনি বলেন, গত বছর আমাদের এখানে (বাংলাদেশে) ছোট পরিসরে পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়েছে৷ পুরুষ নির্যাতন নিয়ে আমরা এখনো কোন গবেষণা বা পরিসংখ্যান পাইনি৷ পুরুষরা যত বেশি পুরুষ হিসেবে নির্যাতিত হয়ে থাকেন তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রেণী, অবস্থান ও আর্থ-সামাজিক দুর্বল অবস্থানের কারণে নির্যাতিত হন৷ একই কারণে নারীও নির্যাতিত হন৷ আমি মনে করি সব নির্যাতনেরই আইনী সুরক্ষা থাকা প্রয়োজন৷

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে প্রথমবারের মতো পালিত হয়। এরপর দিবসটি জাতিসংঘের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশটি দেশে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।

এর আগে ১৯৯৪ সালে প্রথমবার পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয়। তবে গোড়ার ইতিহাসটা বেশ পুরনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে।

২০০২ সালে দিবসটির নামকরণ করা হয় ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ তখনকার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই দিবসটি পালন করা হতো। বলা যায়, নারী দিবসের অনুরূপভাবেই দিবসটি পালিত হয়।

মুলতঃ ষাটের দশক থেকেই পুরুষ দিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস নিজের লেখায় এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম। পরবর্তী সময়ে ১৯ নভেম্বর পুরো বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিএনএ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ