30 C
আবহাওয়া
৫:১৭ পূর্বাহ্ণ - মে ১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৩ (মুন্সিগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৩ (মুন্সিগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৩ (মুন্সিগঞ্জ-৩)

বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের হালচাল।

YouTube player

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসন 

মুন্সিগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনটি মুন্সীগঞ্জ সদর এবং গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৭৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম সামশুল ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮ শত ৩৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৬ হাজার ৬শত ২৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম সামশুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এডভোকেট মোকতাদির । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৪ শত ৮৮ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ: বিএনপির এম সামশুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির এম সামশুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম সামশুল ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪ শত ৩১ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম সামশুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৭শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ লুৎফর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৬ শত ৭০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম সামশুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম সামশুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহবুব উদ্দিন আহমদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৬ শত ৮২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এম ইদ্রিস আলী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭ শত ৬৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭২ হাজার ১ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম ইদ্রিস আলী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৪ শত ৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম সামশুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৯ শত ৪০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মৃণাল কান্তি দাস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মৃণাল কান্তি দাস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ১৬ হাজার ৫ শত ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১ শত ৭৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। নৌকা প্রতীকে মৃণাল কান্তি দাস, ধানের শীষ বিএনপির আব্দুল হাই, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির গোলাম মো. রাজু, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর সৈয়দ মোখলেছুর রহমান, কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির শেখ মো. শিমুল, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের ইকবাল হোসেন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের রুহুল আমিন ভুঁইয়া, একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মৃণাল কান্তি দাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ১৩ হাজার ৩ শত ৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল হাই। ।ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১২ হাজার ৭ শত ৩৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ,অষ্টম, সংসদে বিএনপি নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৮.১১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৫২%, বিএনপি ৬৫.২৫%, জাতীয় পাটি ১.৮০%,,জামায়াত ইসলামী ০.৭৯, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৯৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.০৪%, বিএনপি ৫৯.৫৯% জাতীয় পাটি ৫.৮১%,জামায়াত ইসলামী ০.৬৭, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৮৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.২৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৩%, ৪ দলীয় জোট ৬২.৩৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৩৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫২.৩৫%, ৪ দলীয় জোট ৪৪.০৭% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৫৮ % ভোট পায়।

মুন্সিগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বড় ছেলে ও মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, সাবেক সংসদ সদস্য ও যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক আবদুর রহমান জীবনসহ আরও হাফ ডজন নেতা মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাই। তবে তিনি অসুস্থ । তাঁর বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন চাইতে পারেন ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামরুজ্জামান রতন, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ইরাদত মানু।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন অভিনেতা রফিকউল্লাহ সেলিম ও জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ এফ এম আরিফুজ্জামান দিদার। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ মনোনয়ন চাইবেন।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭৫-এর পর মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য পায় আওয়ামী লীগ। এর আগে আসনটিতে বিএনপি পাঁচবার ও জাতীয় পার্টি দুবার নির্বাচিত হয়।

আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল চরমে। সভা-সমাবেশে একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বক্তব্যও দিচ্ছেন। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা।

মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ভাগে নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব মহিউদ্দিন গ্রুপের সমর্থক।

বিএনপিও কোন্দল মুক্ত নয়। দলটির স্থানীয় রাজনীতিতে দুটি পক্ষ আছে। তাঁরা হলেন জেলার আহ্বায়ক আব্দুল হাই ও কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন। ২০১৭ সালে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন কামরুজ্জামান রতন। এরপর থেকে দলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হাইয়ের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৭৩ তম সংসদীয় আসন (মুন্সীগঞ্জ-৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে। তবে যে দল কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে মনেপ্রাণে কাজ করবে সেই দলেই বিজয়ী হবে বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহেনা, ওজি,ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ