বিএনএ,ডেস্ক : ছোট সাজ্জাদ। হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৫টি মামলার আসামী। তার এক অনুসারিকে গ্রেপ্তারের পর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের ওপর ক্ষুদ্ধ হন তিনি। এক পর্যায়ে ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে নগ্ন করে রাস্তায় পেটানোর হুমকিও দেন। এরপর গত ২৯ জানুয়ারি তাঁকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন সিএমপির পুলিশ কমিশনার। পুলিশের হাত থেকে বাচঁতে সাজ্জাদ ঢাকায় আত্মগোপন করে।

আত্মগোপন অবস্থায় ঈদ শপিং করতে গত ১৫ মার্চ রাজধানীর এলিট শপিং কমপ্লেক্স বসুন্ধরায় শপিং করেত গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী সিএমপি পুলিশের পুরস্কারপ্রাপ্ত আসামী ছোট সাজ্জাদ। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী তামান্না শারমিন। কিন্তু বিধিবাম ,প্রতিপক্ষ সাজ্জাদ-তামান্না দম্পতিকে দেখে হৈ-চৈ শুরু করে এবং তাদের ঘেরাও করে রাখে। এসময় সাজ্জাদকে মারধর করে এবং তার গায়ের টিশার্ট ছিড়ে দেয় আটককারীরা। নিরাপত্তা রক্ষীরা এসে পুলিশের পুরস্কার ঘোষণার আসামী ছোট সাজ্জাদকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় গত বছর জুলাই আন্দোলন পরবর্তীতে বিয়ে করা স্ত্রী তামান্না শারমিন। এই সময় সাজ্জাদ তাকে চিৎকার করে ডাকলেও সাড়া দেননি তিনি।
পরবর্তীতে তেজগাঁও থানা পুলিশ এসে ছোট সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যায় এবং সিএমপি পুলিশকে হস্তান্তর করে। পরদিন লাইভে আসে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন। কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা দিয়ে জামিনে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনার হুমকি দেন।
কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা দিয়ে ছোট সাজ্জাদের জামিন করতে পারেনি তামান্না শারমিন। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে ৩১৩ জনকে ডিঙিয়ে নিজের আগাম জামিন নিয়েছেন তামান্না শারমিন।
গত ৯ এপ্রিল বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমান পরিচালিত একটি বেঞ্চ এই আগাম জামিন দেন। আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিতে হাইকোর্টের ওয়েবসাইটের লিংক, পোস্টে জুড়ে দিয়েছেন তিনি। উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণে দেখা গেছে, ৫৪৭টি মামলার আগাম জামিনের শুনানিতে বিচারক ১৫০ নম্বর পর্যন্ত শুনানির পর ৩১৩ জনকে ডিঙিয়ে ৪৬৩ নম্বরে থাকা তামান্না শারমিনের সিরিয়ালে চলে যান। কার্যতালিকার ১৫০-র পর, ৪৬৩ নম্বরে থাকা তামান্নার মামলা ঠিক কোন্ যৌক্তিকতায় ১ মিনিটে শুনানি শেষ করে আগাম জামিনের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।
ফেসবুকে জুলকারনাইন তার পোস্টে লিখেছেন, চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ কিছু দিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী তামান্না শারমিন ‘কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে আদালত ও জামিন’ কিনে নেওয়ার কথা বলে দেশের আইন ও নিরাপত্তা সংস্থাকে রীতিমতো অপমান করেছেন। সেই তামান্নাকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তিনি লিখেছেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো- বিজয় ৭১ ভবনের ২৫ নম্বর কোর্টে বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমান পরিচালিত ৫৪৭টি মামলার আগাম জামিনের শুনানি থাকলেও দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে সিরিয়াল নম্বর ১৫০ পর্যন্ত শুনানি চলে, এবং তারপরই বিচারক, সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমীনের মামলায় চলে যান এবং ১ মিনিটের মধ্যেই জামিন মঞ্জুর করে দেন। এরপর তিনি দ্রুততার সঙ্গে আরও কয়েকটি মামলার শুনানি শেষ করেন ।
জুলকারনাইন আরও লিখেন, ‘সাধারণত আদালত গুরুত্ব বিবেচনায় অর্থাৎ সচরাচর কারও জটিল রোগ বা আপনজন মারা গেলে তখন মূল সিরিয়াল ভেঙ্গে যে কোনো একটি সিরিয়ালের মামলা ধরতে পারে। কিন্তু ১৫০’র পর, ৪৬৩ নম্বরে থাকা তামান্নার মামলা ঠিক কোন যৌক্তিকতায় ১ মিনিটে শুনানি শেষ করে আগাম জামিনের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেওয়া হলো?
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সারাদেশে কারাগারে আটক হাজার হাজার নিরীহ মানুষ আদালতে জামিনের জন্য আহাজারি করছে কিন্তু তাদের জামিনে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না, সেখানে ডাবল মার্ডার মামলার এজাহারভূক্ত আসামী সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন জামিন পায় কীভাবে? কাঁড়ি কাঁড়ি, টাকার যাদুতেই কী ৩১৩ জনকে ডিঙিয়ে তামান্না আগাম জামিন পেয়েছে?
বিএনএ