39 C
আবহাওয়া
৪:২৪ অপরাহ্ণ - মে ১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭০ (মানিকগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭০ (মানিকগঞ্জ-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মানিকগঞ্জ -৩ আসনের হালচাল।

মানিকগঞ্জ- ৩ আসন

মানিকগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনটি সদর উপজেলার আটিগ্রাম, নবগ্রাম, কৃঞ্চপুর, গড়পাড়া, জাগীর, দির্ঘীর, বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন ও সাটুরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৭০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির হারুনুর রশিদ খান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ২ শত ৪৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির নিজাম উদ্দিন খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৯ শত ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মফিজুল ইসলাম খান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৬৮ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির হারুনুর রশিদ খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির নিজাম উদ্দিন খান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির হারুনুর রশিদ খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮ শত ৯১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ১ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির নিজাম উদ্দিন খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৭ শত ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কর্নেল এম এ মালেক। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৫ শত ৩২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির হারুনুর রশিদ খান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮ শত ৭১ জন। নির্বাচনে বিএনপির হারুনার রশিদ খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ৪ শত ৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জাহিদ মালেক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ১ শত ৩৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির এস এম আবদুল মান্নান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৫ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহিদ মালেক স্বপন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩০ হাজার ১ শত ১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হারুনার রশিদ খান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯২ হাজার ২ শত ১৬ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মমতাজ বেগম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহিদ মালেক স্বপন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মমতাজ বেগম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭ শত ২২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬০ হাজার ৮ শত ৬৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জাহিদ মালেক স্বপন, উদীয়মান সূর্য্য প্রতীকে গন ফোরামের মফিজুল ইসলাম খান কামাল, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের ইব্রাহীম হোসেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জহিরুল আলম রুবেল, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রফিকুল ইসলাম অভি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহিদ মালেক স্বপন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২০ হাজার ৫ শত ৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গনফোরামের মফিজুল ইসলাম খান কামাল। উদীয়মান সূর্য্য প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৯ হাজার ৯ শত ৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মানিকগঞ্জ -৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ -৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৩.৫৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩.০৬%, বিএনপি ৫০.৭৫%, জাতীয় পাটি ৯.৩৪%,,জামায়াত ইসলামী ৩.২২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৩.৬৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.১৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২০.৭৫%, বিএনপি ৪৪.৫৮% জাতীয় পাটি ২৮.৬১%,জামায়াত ইসলামী ১.৩৪ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৭২ % ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৫৬ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.০৭%, ৪ দলীয় জোট ৫৬.৪৪%, জাতীয় পাটি ৩.৭৯%,,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭০% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.১১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৭.৫৮%,, ৪ দলীয় জোট ৪০.৮১% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬১%ভোট পায়।

মানিকগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবুও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম খান বাবলু, সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু ও সাবেক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ড. রফিকুল ইসলাম। তবে জাহিদ মালেক ছাড়া এলাকায় প্রচারে ও মাঠের রাজনীতিতে নেই অন্যরা।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে, মুন্নু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবার তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলা যায়। মনোনয়নে তালিকায় আছেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমানে গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামাল এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. জহিরুল আলম রুবেল মনোনয়ন চাইবেন।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ ৩ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এই আসনে স্বাধীনতার পর বিএনপি ছয়বার বিজয়ী হয়। সম্প্রতি এক দফার আন্দোলন ঘোষণা ও ঢাকায় বাধাহীনভাবে সমাবেশ করেছে বিএনপি। সে কারণে সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জ ৩ সংসদীয় আসনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙাভাব বিরাজ করছে। আফরোজা খান রিতার নানা প্রতিকূলতার মাঝেও রাজনৈতিক কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করার মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীদের একত্র করে মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করছেন। দলীয় কোন্দল না থাকায় বিএনপি অনেকটা নির্ভার। এবার বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া।

আওয়ামী লীগও বসে নেই। নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে সাটুরিয়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা ও মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেছে। যদি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কোথাও ভোটের মাধ্যমে কমিটি করা হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত থেকে তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক স্বপন এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ। রাষ্ট্রীয় কাজ শেষ করে যখন সুযোগ পান মানিকগঞ্জের নিজ বাড়িতে ছুটে আসেন এবং জেলা ও উপজেলায় দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন। গত ১৫ বছরে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, জুডিশিয়াল ভবন, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালসহ তার গৃহীত অসংখ্য উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। এসব উন্নয়ন প্রকল্প ও সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভর করে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হতে চান জাহিদ মালিক স্বপন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৭০ তম সংসদীয় আসন (মানিকগঞ্জ-৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটারগণ।

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ