26 C
আবহাওয়া
৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ - মে ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩৪ (জয়পুরহাট-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩৪ (জয়পুরহাট-১)

জয়পুরহাট-১

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে জয়পুরহাট-১ আসনের হালচাল।

জয়পুরহাট-১ আসন

জয়পুরহাট-১ সংসদীয় আসনটি জয়পুরহাট সদর এবং পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩৪ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন:  বিএনপির গোলাম রাব্বানী বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ২ শত ৪৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫শত ১৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির গোলাম রাব্বানী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ১ শত ৬৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্বাস আলী মণ্ডল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৯১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপি প্রার্থী গোলাম রাব্বানীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিরোধও করে। নির্বাচন পন্ড হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেই। তবে বিএনপি প্রার্থী গোলাম রাব্বানীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় । এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল আলিম বিজয়ী 

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৫ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১০ হাজার ৪শত জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল আলিম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯০ হাজার ৭ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্বাস আলী মন্ডল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৭ শত ৬৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল আলীম পুনরায় নির্বাচিত

২০০১ সালের  ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪ শত ৮৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৫ শত ১৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল আলীম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮ শত ৩০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আব্বাস আলী মন্ডল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৯ শত ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোজাহের আলী প্রধান বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭ শত ৯২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯ শত ১৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোজাহের আলী প্রধান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮ শত ২০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সামছুল আলম দুদু । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩০ হাজার ৫ শত ২৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সামছুল আলম দুদু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সামছুল আলম দুদু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের সামছুল আলম দুদু বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯৯ হাজার ২ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৪ হাজার ২শত ৭৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সামছুল আলম দুদু, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ফজলুর রহমান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আসম মোক্তাদির তিতাস, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দেওয়ান মুহাম্মদ জহুরুল ইসলাম, মই প্রতীকে বাসদের ওয়াজেদ পারভেজ, ডাব প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলেয়া বেগম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামছুল আলম দুদু বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮ শত ২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলেয়া বেগম। ডাব প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ২ শত ১২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

জয়পুরহাট-১ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এবারও মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য, সামছুল আলম দুদু, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট।, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল, সহসভাপতি এডভোকেট নৃপেন্দ্র নাথ মন্ডল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খাজা সামশুল হক, জয়পুরহাট পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, জয়পুরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব।

বিএনপির থেকে মনোনয়ন চাইবেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রয়াত এমপি আব্দুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীম, জয়পুর হাট জেলা বিএনপির আহবায়ক প্রয়াত সংসদ সদস্য মোজাহের আলী প্রধানের ছেলে, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফয়সাল আলীম প্রধান, জয়পুর হাট সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ সামশুল হক, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক গোলজার হোসেন, পাঁচবিবি উপজেলার বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুর মন্ডল।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পাটি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসম মোক্তাদির তিতাস, জেলা জাতীয় পার্টির সভপতি হেলাল উদ্দিন।
এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দেওয়ান মুহাম্মদ জহুরুল ইসলাম, বাসদের ওয়াজেদ পারভেজ, দলীয় প্রার্থী হিসাবে ভোটের মাঠে থাকবেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-৫ আসনে জাতীয় পার্টি পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি প্রার্থীরা টানা বিজয়ী হয়। শুধু দশম, একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর জয়পুর হাট-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্ঠা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.৬৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৯২%, বিএনপি ৩০.৯৭ %, জাতীয় পার্টি ১.২%, জামায়াত ইসলামী ২৭.৮৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯.০৬% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৬৩% । প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৮৮ %, বিএনপি ৪৩.১১ %, জাতীয় পার্টি ৯.৭০%, জামায়াত ইসলামী ১৭.৯২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.০৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.২৯%, ৪ দলীয় জোট ৬৩.৮০ %, জাতীয় পার্টি ৩.২২%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬৯% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৫০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৪৩.৫২%, ৪ দলীয় জোট ৫৪.৯৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.৫৩% ভোট পায়।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, জয়পুরহাট-১ আসনে সাংগঠনিক দিক থেকে সবচেয়ে মজবুত অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও আওয়ামী লীগে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। জামায়াত ইসলামীর প্রচুর ভোট রয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় ধর্মভিত্তিক দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে লাভবান হবে বিএনপি। নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়পুরহাট-১ আসনটি আবারও ফিরে পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ