24 C
আবহাওয়া
৩:১১ পূর্বাহ্ণ - মে ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ঢাবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল

ঢাবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল


বিএনএ, ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর এর অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এর আর্টিকেল ১১ (২) ধারা অনুযায়ী তাঁকে এই নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ২০২০ সালের জুন মাস থেকে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক)-এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। এর পূর্বে ভূতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। ড. মাকসুদ কামাল বিশ্বখ্যাত University College London, UK তে Visiting Professor হিসেবে এপ্রিল ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৭ পর্যন্ত নিয়োগ লাভ করেছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের Institute for Risk and Disaster Reduction (IRDR) -এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করে আসছেন।

অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ২০০০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং একই বিভাগে ২০১০ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানে (স্পারসো) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে প্রায় ছয় বছর কর্মরত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Bose Center for Advanced Study and Research in Natural Sciences -এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে দুই বছর গবেষণা কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে যথাক্রমে ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পাঠদান করেছেন।

ড. মাকসুদ কামাল ভূমিকম্প ও সুনামি এবং নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে UNDP/CDMP, Bangladesh প্রকল্পে চার বছর কাজ করেছেন। এর পূর্বে তিনি ২০০৭ সালে ভূমিকম্প দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে UNDP / ADPC, Iran-এ কাজ করেছেন। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলা এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে তিনি শিক্ষাবিদ ও গবেষক হিসেবে দেশ-বিদেশে অত্যন্ত সুপরিচিত সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের বহু প্রকল্পে কারিগরি উপদেষ্টা/বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের Disaster Management Advisory কমিটির সদস্য। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথেও তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ১৯৮২ সালে এসএসসি ১৯৮৪ সালে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে ১৯৮৮ সালে বিএসসি (অনার্স) এবং ১৯৮৯ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সকল পরীক্ষায় তিনি প্রথম ডিভিশন / বিভাগ প্রাপ্ত হয়েছেন।

১৯৯৮ সালে তিনি International Institute for GeoInformation Sciences and Earth Observation, University of Twente, The Netherlands থেকে Applied Geomorphology and Engineering Geology বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে তিনি Tokyo Institute of Technology (TIT) Japan থেকে Earthquake Engineering বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর ৬৫টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রবন্ধ, রিপোর্ট, বুক চ্যাপ্টারসহ তাঁর ১০০টির উপরে গবেষণাকর্ম রয়েছে। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে তিনি Reviewer হিসেবে অবদান রেখে আসছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তিনি জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করছেন। এসবের মধ্যে University College London, UK; Peking University, China; Tokyo University, Japan এবং University of Edinburgh, UK অন্যতম অধ্যপক ড. মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল পর্যায়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (২০১২-২০১৭) ছিলেন যা বর্তমানে ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ নামে পরিচিত। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পাওয়ার পূর্বে ২০১২ সাল থেকে আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিনের (চারবার নির্বাচিত) দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিনের দায়িত্বে থাকাকালীন আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দুই মেয়াদে (২০১৩-২০১৮) তিনি মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ড. মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির চার মেয়াদে সভাপতি (২০১৭-২০২০) এবং তিন মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক (২০১৪-২০১৬) ছিলেন।

এছাড়া, তিন মেয়াদে (২০১৭- ২০১৮২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং মহাসচিব ( ২০১৫-২০১৬) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষক সমিতি ও ফেডারেশনের দায়িত্বকালীন সময়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য বিভিন্ন কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তিনি অবদান রেখে আসছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।

ড. মাকসুদ কামাল বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি National Oceanographic and Maritime Institute (NOAMI)-এর চেয়ারম্যান এবং Bangladesh Society of Informatics (BSI)-এর সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। ইতোপূর্বে Bangladesh Geological Society (BGS)-এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং Bangladesh Earthquake Society (BES) এর Executive কমিটির সদস্য ছিলেন।

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল লক্ষ্মীপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ২১ নভেম্বর ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব ফরিদ আহমেদ এবং মাতা মরহুমা মাছুমা খাতুন ছিলেন সমাজহিতৈষী ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব। তাঁর পিতা একজন সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীও ছিলেন। ড. মাকসুদ কামালের অগ্রজ প্রয়াত এ কে এম শাহজাহান কামাল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং তিন মেয়াদে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ড. মাকসুদ কামালের স্ত্রী সৈয়দা আফসানা ফেরদৌসি একজন শিক্ষাবিদ এবং University of Information Technology and Sciences (UITS ) -এর Faculty of Liberal Arts and Social Science-এ ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক। ড. মাকসুদ কামাল একজন জনহিতৈষি ব্যক্তি। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তিনি নিবেদিতভাবে কাজ করে আসছেন। তাঁর মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ফরিদ মাছুমা ফাউন্ডেশনের তিনি চেয়ারম্যান। শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি অব্যাহতভাবে অবদান রেখে চলেছেন।

ড. মাকসুদ কামাল বিষয়ভিত্তিক ও সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে গণমাধ্যমে লেখালেখি করেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও তিনি বিষয়ভিত্তিক মতামত প্রদান করে থাকেন। তাঁর লেখালেখি মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়াবলী কেন্দ্রিক।

বিএনএ নিউজ/মোছাদ্দেক, এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ