31 C
আবহাওয়া
১:২৭ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৬ (কিশোরগঞ্জ-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৬ (কিশোরগঞ্জ-৫)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের হালচাল।

কিশোরগঞ্জ-৫ আসন

কিশোরগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনটি নিকলী এবং বাজিতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৬৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এড.আব্দুল হামিদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২২ হাজার ৮ শত ৬১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৩ শত ৮৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এড.আব্দুল হামিদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৭ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ৫ শত ৪০ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ইমদাদুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির ইমদাদুল হক কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ১ শত ৮৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ২ শত ৭২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এড.আব্দুল হামিদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফজলুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ২৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এড.আব্দুল হামিদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৬ শত ৫৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৬ শত ৩৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এড.আব্দুল হামিদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৩ হাজার ৯ শত ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফজলুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৬ শত ৫৬ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো: আফজাল হোসেন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩ শত ৮৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো: আফজাল হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৭ শত ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মজিবুর রহমান মঞ্জু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৫ শত ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো: আফজাল হোসেন বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো: আফজাল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো: আফজাল হোসেন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ১ শত ৭১ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো: আফজাল হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনে মো: ইব্রাহীম,কাস্তে প্রতীকে সিপিবির ফরিদ আহম্মদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো:আফজাল হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২ হাজার ১ শত ৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৮ হাজার ৫ শত ৯৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ, অষ্টম, সংসদে বিএনপি, পঞ্চম, সপ্তম , নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫১.৩৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৪.৮৯%, বিএনপি ২৩.২০%, জাতীয় পাটি ২.০১%,,জামায়াত ইসলামী ৩.৫৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.৩৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৩৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৯৭%, বিএনপি ১৮.৬৩% জাতীয় পাটি ৫.৫০%,জামায়াত ইসলামী ১.৫১ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৭.৩৯ % ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.২৯ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫১.৪২%, ৪ দলীয় জোট ১৩.৭২%,,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৪.৮৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৪.০৮%,, ৪ দলীয় জোট ৩৩.৯৭% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৯৫%ভোট পায়।

কিশোরগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি মোঃ আফজল হোসেন। টানা তিন বারের সংসদ সদস্য আফজল হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউল হক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডঃ শেখ নুরুন্নবী বাদল, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য শেখ রফিকুন্নবী সাথী,
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, সাবেক সংসদ সদস্য আমীর উদ্দীনের ছেলে এডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য, ইতালি বিএনপি শাখার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ বদরুল আলম শিপু। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি হাজী মোঃ মাসুক মিয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ নাসির,
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন এডভোকেট শামছুল আলম। তিনি দলের একক প্রার্থী।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ ৫ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই আসন থেকে ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ২০১৮ সালের একাদশ সংসদে বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ আফজল হোসেন নির্বাচিত হন। কিন্তু দলে রয়েছে একাধিক গ্রুপ ও বিরোধ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। তার ওপর রয়েছে দলীয় কোন্দল। সংকট আছে জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের নেতার। তবে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচুর ভোট রয়েছে। বিএনপি আসনটি পুরুদ্ধার করেত মরিয়া। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চায় আবারও বিজয়। সব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৬৬ তম সংসদীয় আসন (কিশোরগঞ্জ-৫) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ