29 C
আবহাওয়া
৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৫ (কিশোরগঞ্জ-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৫ (কিশোরগঞ্জ-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের হালচাল।

YouTube player

কিশোরগঞ্জ-৪ আসন 

কিশোরগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনটি ইটনা, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৬৫ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ড.মিজানুল হক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার ২ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩ শত ৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড.মিজানুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৬ শত ৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কবির উদ্দীন আহমেদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৫ শত ৫৪ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কবির উদ্দীন আহমদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির কবির উদ্দীন আহমদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ড.মিজানুল হক বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৩ শত ১৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড.মিজানুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ২ শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পাটির মজিবুল হক চুন্নু।লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৩ শত ৯৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ওসমান ফারুক বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬ শত ৭১ জন। নির্বাচনে বিএনপির ওসমান ফারুক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৪ শত ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ড.মিজানুল হক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ২ শত ৩২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো:আব্দুল হামিদ এডভোকেট বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৮ শত ৩২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১০ হাজার ৯ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো:আব্দুল হামিদ এডভোকেট বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার ৩ শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো:ফজলুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯২ হাজার ৫২ ভোট।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদকে সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। উপ-নির্বাচনে আব্দুল হামিদের বড় ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২০ হাজার ২ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪ শত ৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ফজলুল রহমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের আহসানুল্লাহ, রিক্সা প্রতীকে খেলাফত মজলিসের খায়রুল ইসলাম ঠাকুর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ৫৭ হাজার ৭ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফজলুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪ হাজার ৯ শত ৩৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি,পঞ্চম, সপ্তম , নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়,কিশোরগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৯.৪০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৫০%, বিএনপি ৩৬.৮৬%, জাতীয় পাটি ১৬.৭৩%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৯১% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৯৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.২২%, বিএনপি ২২.৫১% জাতীয় পাটি ৩৫.৯১% , জামায়াত ইসলামী ৪.০৩ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৩ % ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৬১ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.১৭%, ৪ দলীয় জোট ৩৩.৭৯%, জাতীয় পার্টি ৩২.২৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৭৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.৩৭ %, ৪ দলীয় জোট ৪৪.৬৩% ভোট পায়।

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এই আসনে তৌফিক একক প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চনের ছেলে ড্যাব নেতা ডা. ফেরদৌস আহাম্মেদ লাকী, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি ও সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সুরঞ্জন ঘোষ, মিঠামইন উপজেলা বিএনপি সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভুঞা।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন অষ্টগ্রাম উপজেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী আফতাব। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) থেকে তপু ভূঁইয়া দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান, কিশোরগঞ্জের অবিসংবাদিত নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ ৪ ও ৫ সংসদীয় আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য হন। কিশোরগঞ্জ ৪ আসেনর বর্তমান সংসদ সদস্য তার বড় ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক। এ আসনের নির্বাচনে আবদুল হামিদের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কাছে বারবার হার মেনেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই তার বাগ্মিতার জন্য জনপ্রিয়।

১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে কিশোরগঞ্জ-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও পরবর্তী সময় দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করায় মোহাম্মদ ফজলুর রহমানকে দল থেকে বহিস্কার করে আওয়ামী লীগ। এরপর তিনি কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগে যোগ দেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে হেরে যান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তাই যদি হয় তাহলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে পুত্রের সঙ্গে পিতার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটযুদ্ধ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৬৫ তম সংসদীয় আসন (কিশোরগঞ্জ-৪) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/  শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ