26 C
আবহাওয়া
১০:৪১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩১ (গাইবান্ধা-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩১ (গাইবান্ধা-৩)


বিএনএ, ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে গাইবান্ধা-৩ আসনের  হালচাল।

গাইবান্ধা-৩ আসন 

গাইবান্ধা-৩ সংসদীয় আসনটি সাদুল্যাপুর এবং পলাশবাড়ী  উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩০ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বিজয়ী

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটার  ছিলেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩ শত ৯৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ২ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৮ শত ৬৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবু তালেব মিয়া । নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৮ শত ৭২ ভোট।

৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপি প্রার্থী মোখলেছুর রহমানকে  বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিরোধও করে। বিএনপি প্রার্থী মোখলেছুর রহমানকে  বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ।

সপ্তম  সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বিজয়ী 

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮ শত ৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৯ শত ৩৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরী নির্বাচিত

২০০১ সালের  ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৫ শত ৫৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৯১ হাজার ১ শত ৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইউনুচ আলী সরকার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৪ শত ৩৯ ভোট।

নবম সংসদ  নির্বাচন: জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী  পুনরায় নির্বাচিত

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ  নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮ শত ৩ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ড. ফজলে রাব্বী  বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর নজরুল ইসলাম। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৪ শত ৬০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ডাক্তার ইউনুচ আলী সরকার বিজয়ী

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮শত ১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শত ৬৩ ভোট। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডাক্তার ইউনুচ আলী সরকার বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৮ হাজার ২ শত ৪ ভোট। আনারস প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ২ শত ৪ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ডাক্তার  ইউনুস আলী সরকার বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪  লাখ ১১ হাজার ৮ শত ৫৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৩শত ৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডাক্তার ইউনুস আলী সরকার, ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় পাটি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপি যোগদানকারি ড. ফজলে রাব্বি মিয়া। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির দিলারা খন্দকার,  হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হানিফ দেওয়ান, মশাল প্রতীকে খাদেমুল ইসলাম খুদি, মই প্রতীকে সাদেকুল ইসলাম,  আম প্রতীকে  ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মিজানুর রহমান তিতু এবং সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র আবু জাফর মোহাম্মদ জাহিদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডাক্তার  ইউনুস আলী সরকার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২১ হাজার ১ শত ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির দিলারা খন্দকার। লাঙ্গল প্রতীকে  প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৩ শত ৮৫ ভোট।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

YouTube player

গাইবান্ধা-৩, সাদুল্যাপুর এবং পলাশবাড়ী  আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ডাক্তার ইউনুস আলী সরকার ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর ৬৬ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উম্মে কুলসুম স্মৃতি বিজয়ী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।  আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয় চাইবেন পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহারিয়ার খান বিপ্লব, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ জাকারিয়া খন্দকার, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল এবং আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান সরকার।

বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, সাদুল্যাপুর কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম রফিক এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান মাসুম।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- এ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বী চৌধুরী এবং দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মমতাজ উদ্দিন।

জাতীয় পার্টি থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার এরশাদের মৃত্যুর পর প্রেসিডিয়াম সদস্য থেক বাদ পড়েন। পরে নিজে একটি দল গঠন করেন জাতীয় পল্লী পার্টি জেপিপি। যদিও এটি এখনও নিবন্ধন পায়নি। এ আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

জাসদের মনোনয়ন চাইবেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম খুদি। সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে চান পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আদিল নান্নু। বাসদ থেকে  সাদেকুল ইসলাম,  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হানিফ দেওয়ান,  ন্যাশন্যাল পিপলস পার্টি থেকে মিজানুর রহমান তিতু দলীয়  মনোনয়ন চাইবেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-৩  আসনে  জাতীয় পার্টি   পঞ্চম, সপ্তম অষ্টম, নবম সংসদে টানা বিজয়ী হয়। দশম একাদশ ও উপ নির্বাচনে সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর গাইবান্ধা-৩ আসনে ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান প্রদানের চেষ্ঠা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৫.৪৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৮৪%, বিএনপি ৩.৩৮ %, জাতীয় পার্টি ৪১.১৩%, জামায়াত ইসলামী ২৩.৩৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.২৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৩৫%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ২৭.২২ %, বিএনপি ৫.১৮ %, জাতীয় পার্টি ৪৮.২৯%, জামায়াত ইসলামী ১৭.১৯%, স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ২.১২% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন  ৭৭.৬২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৭১%, ৪ দলীয় জোট ২৮.৬৪ %, জাতীয় পার্টি ৩৭.৮০%,স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ১.৮৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.১৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৬২.৮৮%, ৪ দলীয় জোট ২৬.৮৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৫৯% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির   সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয় ।  নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩১ নম্বর আসন, গাইবান্ধা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও  জাতীয় পার্টির মধ্যে ভোটের লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে।

 

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ