29 C
আবহাওয়া
৯:২৬ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬০ (নেত্রকোনা-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬০ (নেত্রকোনা-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নেত্রকোনা-৪ আসনের হালচাল।

YouTube player

নেত্রকোনা-৪ আসন 

নেত্রকোনা-৪ সংসদীয় আসনটি মোহনগঞ্জ,মদন এবং খালীয়াজুড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত।এটি জাতীয় সংসদের ১৬০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির লুৎফুজ্জামান বাবর বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১২ হাজার ৪ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২১ হাজার ১ শত ৪৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির লুৎফুজ্জামান বাবর বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ২ শত ৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মমিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৩ শত ৩৮ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির লুৎফুজ্জামান বাবর কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির লুৎফুজ্জামান বাবর কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল মমিন বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬ শত ৯৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫ শত ৭৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মমিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ৬ শত ৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির লুৎফুজ্জামান বাবর। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৭ শত ৯৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির লুৎফুজ্জামান বাবর বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৯ শত ১০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬ শত ২০ জন। নির্বাচনে বিএনপির লুৎফুজ্জামান বাবর বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ৬ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মমিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৮ শত ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩১ হাজার ৬ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১ হাজার ৩ শত ৯৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ৩ শত ৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী লুৎফুজ্জামান বাবর। আনারস প্রতীকে তিনি পান ৯০ হাজার ৪ শত ৬৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন প্রত্যাখান করে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ২ শত ৩৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭ শত ৩১ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির তাহমিনা জামান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মোফাজ্জল হোসেন, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির জলি তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪ হাজার ৪ শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির তাহমিনা জামান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৮ হাজার ১ শত ৮১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

২০২৩ সালের ১১ জুলাই সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন মৃত্যুবরণ করেন। উপ নির্বাচনে তফশীল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে মনোনয়ন দেন। কিন্তু অন্য কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা না করায় ৩১ জুলাই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নেত্রকোনা-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নেত্রকোনা-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.০১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.০৩%, বিএনপি ৫০.৫৪%, জাতীয় পাটি ১.৬৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৭৬% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৩২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫০.৯৭%, বিএনপি ৩৯.৫৪% জাতীয় পাটি ৫.৮৯% , জামায়াত ইসলামী ২.৪৯ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১১% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৭২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.২৯ %, ৪ দলীয় জোট ৫০.৪৮%, জাপা ১.২৩ ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.২২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৩.২৫ %, ৪দলীয় জোট ১.৫২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪৫.২৩% ভোট পায়।

নেত্রকোনা-৪ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।

সাজ্জাদুল হাসানের রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য । মোহনগঞ্জের কৃতিসন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক গণপরিষদ সদস্য মরহুম ডা. আখলাকুল হোসাইন আহমেদ তার পিতা। বড় ভাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারক। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তার প্রধান বিচারপতি হিসাবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কারান্তরীন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সহধর্মীনি তাহমিনা জামান শ্রাবণী। তিনি দলের একক প্রার্থী।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান তিন উপজেলায় ৭ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ, নেত্রকোনার চল্লিশা বাগরা-মেদনী-রাজুরবাজার সংযোগ সড়ক, ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক, ৩১০কোটি টাকা ব্যয়ে ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়ক, ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা মহাসড়ক প্রসস্তকরণ, ২৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেষখলা-কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সীমান্ত সড়ক ও ২৭টি ব্রিজ নির্মাণ ইত্যাদি। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য এ আসনের তিন উপজেলায় সাধারণ মানুষের কাছে সাজ্জাদুল হাসান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন ।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-প্রকাশনা সম্পাদক লুৎফুজ্জামান বাবর এ আসনে নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে বেকারত্ব দূরীকরনে এলাকার অসহায়দের বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ করে দেন। ফলে এলাকায় তারও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু লুৎফুজ্জামান বাবর কারাবন্দ্বী হওয়ার পর থেকে তার জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। দেখা দিয়েছে দলের সাংগঠনিক স্থবিরতা । নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বামীর অনুপস্থিতিতে নির্বাচনী এলাকার দলের নেতা কর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন বাবরপত্নী তাহমিনাজ্জামান শ্রাবণী।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৬০তম সংসদীয় আসন (নেত্রকোনা-৪) আসনটিতে আওয়ামীলীগকেই ফেবারিট মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী,রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ